এবার দেব আসছে বিপ্লবী দিনেশ গুপ্তের চরিত্রে

498

এই বাংলা সশস্ত্র বিপ্লবের আঁতুড়ঘর হওয়া সত্ত্বেও বাংলায় বিপ্লবীদের নিয়ে তেমন একটা ছবি এখনও হয় নি বলে বাংলার দর্শকমহলে একটি আক্ষেপ ছিল। সেই আক্ষেপ বোধহয় এবার মিটতে চলেছে। কারন আগামী বছরের শুরুতেই বিশ্ববিখ্যাত ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নিয়ে ছবির শ্যুটিং শুরু হবে। সেই ছবিতে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তর ভূমিকায় দেখা যাবে টলিউডের হার্ডকোর কমার্শিয়াল হিরো দেব-কে।

এই ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ এর ঘটনাটি ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বরের। বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত—এই তিন বিপ্লবী ইউরোপিয়ানের ছদ্মবেশে প্রবেশ করেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। উদ্দেশ্য, ইনসপেক্টর জেনারেল অব প্রিজন, কর্নেল এন এস সিম্পসনকে হত্যা করা। সে কাজে তাঁরা সফল হলেও সঙ্গে সঙ্গে পাশের লালবাজার থেকে থেকে ছুটে এল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ততক্ষণে আরও তিন ইংরেজ অফিসার বিপ্লবীদের গুলিতে আহত হয়েছেন। তিন বিপ্লবী রিভলবারে গুলি থাকা পর্যন্ত লড়ে গেলেন পুলিশের সঙ্গে। শেষপর্যন্ত বাদল গুপ্ত সায়ানাইড ট্যাবলেট খেয়ে আর বিনয় ও দীনেশ নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন। বাদল সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেলেন। বিনয় আর দীনেশকে হাসপাতালে ভরতি করা হল। বিনয় হাসপাতালে গুলির ক্ষত বিষিয়ে দিয়ে মারা গেলেন। বেঁচে গেলেন দীনেশ। তাঁর বিচার হল। ফাঁসির আদেশ দিলেন বিচারক গার্লিক। ফাঁসির দিন পর্যন্ত আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন দীনেশ। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের। জেলের কনডেমড সেলে থাকাকালীন দিদি অমিয়াকে ৯২টি চিঠি লিখেছিলেন দীনেশ। পরে সেই চিঠির ভিত্তিতে লেখা হয় ‘আমি সুভাষ বলছি’ নামে একটি বই। লিখেছিলেন শৈলেশ দে।

সিনেমার গল্পটি এই ঘটনাকে নিয়েই। ছবিটির শ্যুটিং হবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বিক্রমপুর প্রভৃতি জায়গায়। তাছাড়া বিহারের কাতরাসগড়ে একটা বড় অংশের শ্যুটিং হবে। কারণ, বিপ্লবী বিনয় বসু ঢাকায় পুলিশের ইনসপেক্টর জেনারেল লোম্যানকে হত্যা করে এই কাতরাসগড়েই এসে লুকিয়ে ছিলেন। তাছাড়া মেদিনীপুরেও হবে একটা বড় অংশের শ্যুটিং। দীনেশ গুপ্ত বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ থেকে মেদিনীপুরে গিয়ে সেখানকার বিপ্লবীদের অস্ত্রচালনা শেখাচ্ছিলেন। সেই সময়েই তাঁর ডাক পড়ে সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনায়। শ্যুটিং হবে রাইটার্স বিল্ডিং, আলিপুর সেন্ট্রাল জেল প্রভৃতি জায়গাতেও। ছবির অনেক দৃশ্যই ভি এফ এক্স করা হবে এবং ক্রোমা শ্যুট করা হবে বলে জানালেন এই ছবির ডিজাইনার, চিত্রনাট্যকার ও কো-ডিরেক্টর অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। অনিকেতের অনুরোধেই ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

দেব অভিনয় করছেন দীনেশ গুপ্তর ভূমিকায় এ এক প্রকার নিশ্চিত হলেও বাকি চরিত্রগুলির অভিনেতাদের নাম এখনও স্থির হয়নি। বিনয় ও বাদলের ভূমিকায় কারা অভিনয় করবেন তা নিয়ে কিছু বলেননি অনিকেত। নেতাজির ভূমিকায় কে অভিনয় করবেন সেটাও সাসপেন্স রাখতে চান তিনি।
তবে সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক চললে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একটা দুর্দান্ত ছবি উপহার পেতে চলেছে চট্টোপাধ্যায়-মুখোপাধ্যায় জুটির থেকে।

ছবিটি প্রযোজনা করবে দেবের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চারস। দেব এর নিজস্ব প্রযোজনার ছবি বরাবরই হিটের তালিকায় থাকে। এবার ভিন্ন ধারার ঐতিহাসিক গল্পের এ ছবিতে দেব এর ভুমিকা নিয়ে টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবল হইচই বিরাজ করছে।