মুভি রিভিউঃ আপগ্রেড (২০১৮)

496

প্রযুক্তির বিস্ময়কর সংস্করণে অনিবার্য পতনের আভাষ!

আধুনিক প্রযুক্তি কিভাবে তার স্রষ্টার অগোচরে দিনের পর দিন তাকেই ব্যাবহার করে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা কেউ ই মাথা ঘামাইনা। প্রযুক্তির হাতে নিজেদের সপে দিয়ে আমরা যেন মহাঘোরে আচ্ছন্ন। সায়েন্স ফিকশন লাভারদের জন্য এককথায় স্বর্গীয় তৃপ্তি এনে দেবে মেলো ড্রামা সাই-ফাই মুভি আপগ্রেড। এবছর বেশ কয়েকটি  সায়েন্স ফিকশন নিয়ে আক্ষেপ ছিলো, দারুণভাবে শুরু করেও কেন যেন এলোমেলো হয়ে যায় গল্প । আক্ষেপ মিটিয়ে দিলো ”আপগ্রেড”।  একটি রক্তাক্ত, ডার্ক আর অসাধারণ গল্পের আবেদন নিয়ে পুরো ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আঁটসাঁট হয়ে বসে থাকবেন স্ক্রিনের সামনে, আর গল্পের টুইস্ট দেখে বলতে বাধ্য হবেন, কতদিন এমন মুভি দেখিনা। ইনসিডিয়াস খ্যাত পরিচালক লি হোয়েনেল তার চিরচেনা হরর থ্রিলারের এর সাথে সায়েন্স ফিকশনের এক অদ্ভুত মিশ্রণে একটি রিভেঞ্জ স্টোরি বানিয়েছেন। যারা ব্লাড এবং ভায়োলেন্স সহ্য করতে পারেন তারা মহানন্দে গ্রহণ করবেন হোয়েনেলের এমন উপহার।

তরুণ উদ্যোক্তা টেক-জিনিয়াস এরন কিনের বিস্ময়কর প্রজেক্ট ”স্টিম” সম্পর্কে জানতে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেখা করতে যান বন্ধু প্রযুক্তিবিদ গ্রে ট্রেস। আধুনিক যুগের সবচেয়ে এডভান্সড ন্যানো টেকনোলোজি ”স্টিম” একটি স্বয়ংসম্পূর্র্ণ অপারেটিং সিস্টেম, যেটি মুহূর্র্তেই আশেপাশের  যেকোন স্বয়ংসম্পূর্ন  সিস্টেমকে কন্ট্রোল করতে পারে। অসাধারণ এ প্রযুক্তিটি সম্পর্কে জেনে, বাসায় ফেরার পথেই একদল সাইবর্গ ক্রিমিনাল গ্যাঙ এর ক্ষপ্পরে পড়েন গ্রে দম্পতি। স্পটেই প্রাণ হারান স্ত্রী আশা আর পুরো শরীর প্যারালাইজড অবস্থায় নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেন গ্রে। আর কোন উপায় না পেয়ে ডক্টররা গ্রে কে হুইল চেয়ারের জীবনে অভ্যস্ত হবার পরামর্শ দেন। এদিকে পুলিশ জানায় সিস্টেম হ্যাক করে নিজেদের চেহারা লুকাতে সক্ষম হওয়ায় দোষীদেরকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। প্রানপ্রিয় স্ত্রীকে হারিয়ে একাকীত্ত্বে ভরা  জীবনের বিষণ্ণ অন্ধকারে তলিয়ে যায় গ্রে। মানষিক ভাবে বিদ্ধস্ত গ্রে একদিন সুইসাইড করার চেষ্টা করে বসেন। সেখানেও ব্যার্থ হবার পর হতাশ গ্রে’র জীবনে আসে নতুন মোড়। হাসপাতালে বন্ধু  এরন কিনের আবির্ভাব ঘটে এক অদ্ভুত সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে। কিন বন্ধুর এমন অবস্থা দেখে প্রস্তাব করেন, তার বিস্ময়কর প্রজেক্ট “স্টিম” কে জুড়ে দেবেন গ্রে’র নার্ভ  টিস্যুর সাথে। ক্ষুদ্রাকৃতির তেলাপোকা আকারের চিপ “স্টিম” নিজেই মস্তিষ্কের সাথে কানেক্ট করবে গ্রে’র অনুভূতির গ্রাহকককে আর সারা দেহে ছড়িয়ে দেবে তার উদ্দীপনা, গ্রে ফিরে পাবে তার হারিয়ে ফেলা কর্মক্ষমতা, এমনকি আগের চেয়ে অনেক বেশি এফিশিয়েন্ট হবে তার বডি, তবে শর্ত এ অপারেশনের কথা সম্পূর্র্ণ গোপনীয় রাখতে হবে। নিরুপায় গ্রে রাজি হয়ে যায় এরণের প্রস্তাবে আর ঘাড়ের পেছনে জুড়ে নেয় “স্টিম” দ্যা ডেভিল অন ইওর শোল্ডার। স্টিম কে সাথে নিয়েই  নিজের শরীরে ভিন্ন এক অস্তিত্বের অনুভূতি আবিষ্কার করে গ্রে। সাথে  শরীরে শক্তি ফিরে পেয়েই বন্ধু এরনের অগোচরে স্ত্রীর খুনিদের খুঁজে বের করার মিশনে নেমে পড়েন সে আর সাথে আপনি সংযুক্ত হবেন আজব এক সাইবার দুনিয়ার রোমাঞ্চকর গল্পে।

মাত্র ৩ মিলিয়ন বাজেটের এ ছবিতে ব্যাবহার করা স্পেশাল ইফেক্ট প্রশংসা করার মতো, গ্রাফিক্সের কাজগুলোও বেশ যত্নের সাথে করা হয়েছে এধরণের লো বাজেটের মুভিতে যেটা করা হয়না। আর সেজন্যই ক্রিটিকদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছে আপগ্রেডেড। তবে হ্যা, এটি একটি কম বাজেটের ছবি যা সহজেই বুঝতে পারবেন। খুব বেশি লোকেশন আর ক্যারেক্টার ব্যাবহার করা হয়নি। আর চরিত্রের কথা বললে হিরো গ্রে ট্রেসের চরিত্রে অভিনয় করা লোগান  মার্শালই  সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন, ভদ্রলোককে বার বার টম হার্ডি ভেবে ভুল করে বসি।  তবে অভিনয় আরো ভালো করা যেত মনে হয়। আর রহস্যময় সাইন্টিস্ট এরন কিনের ক্যারেক্টারে অভিনয় করা হ্যারিসন গিলবার্টসনের মাঝে ব্লেড রানার ২০৪৫ এ জার্ড লেটোর ছাপ পেতে পারেন। সব মিলিয়ে আপগ্রেড দারুন একটি মুভি। সাইবার ওয়ার্ল্ড , এডভান্সড টেক , একশন আর হরর মিলিয়ে বেশ ভালো সময় কাটানোর প্রতিশ্রুতি দেবে এডভান্স।

ছবির ধরনঃ সায়েন্স-ফিকশন, একশন , হরর, থ্রিলার

রেটিংঃ ৭.৭ (IMDB)
সময়ঃ ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট

কাষ্টঃ  Logan Marshall, Betty Gabriel, Harrison Gilbertson, Benedict Hardie