কে এই রাম রহিম? কোন অপরাধে তার সাজা ঘোষনা? কেন বিক্ষুব্ধ হরিয়ানা?

217

রাম রহিম নিজেকে ‘মেসেঞ্জার অফ গড’ বলেন। প্রায় হাজার একর জমির মাঝখানে আয়নায় মোড়া এক প্রাসাদ। তার নাম ‘বাবা কি গুফা’। দামি আসবাবপত্র, সোফা, পর্দায় সাজানো বিলাসবহুল সেই প্রাসাদেই বাস গুরমিত রাম রহিম সিংহের। গুফায় তাকে ঘিরে থাকেন ২০০ জনেরও বেশি বাছাই করা শিষ্যা। রাম রহিমের কনভয়ে বিলাসবহুল ১০০টি গাড়ি। তার মধ্যে ১৬টি কালো রঙের ফোর্ড এনডেভার।

রাম রহিমের সেবায় নিয়োজিত সেবিকা

সিরসায় ডেরা সচ্চা সৌদার এই সদর দফতর আসলে নিছক আশ্রম নয়। ছোটখাটো শহর। ডেরা-র ভিতরেই চাল, ডাল, আনাজের চাষ হয়। হোটেল, সিনেমা হল, স্কুল, রেস্তোরাঁ, মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, স্টুডিও, বায়ো-গ্যাস কারখানা, পেট্রোল পাম্প, সংবাদপত্রের ছাপাখানা— সবই রয়েছে।

রাম রহিমের বাহারী পোশাক

এক সঙ্গে ১০ হাজার জামাকাপড় কাচার ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াশিং মেশিনও রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে কন্ট্রোল রুম, গোটা ডেরা জুড়ে নজরদারি ব্যবস্থা। সিরসা ছাড়াও দেশেবিদেশে আরও ৪৬টি আশ্রম রয়েছে রাম রহিমের।

রাম রহিমের পছন্দ বাহারী রঙের পোশাক

আর এই কথিত ধর্মগুরুরর জন্য ভারতের হরিয়ানায় চলছে তাণ্ডব, আগুন, ভাঙচুর এবং মৃত্যু মিছিল। তিনি এখন ধর্ষক বাবা নামেও পরিচিত।  অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয় কথিত এই ধর্মগুরুকে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে জেলের মধ্যেই উড়িয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে বিচারক-সহ গোটা আদালত।

ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রোহতক। ১৫ বছর ধরে ২ নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় ডেরা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহ দোষী প্রমাণীত হয়। সিবিআইয়ের মুখপাত্র জানান, দু’টি মামলাতে ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর। যদিও কারাগারে তিনি আলাদা কক্ষ ও দুই জন এসিস্টেন্ট পেয়েছেন। দুই নির্যাতিতাকে ১৪ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে তাঁকে। দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর দুই রাজ্যজুড়ে চলা তাণ্ডবে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৬ জনের।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সে দিন ভক্তরা যে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে এসেছিলেন, এমনটা নয়। আশ্রমের তরফেই তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে দিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তেরা যাতে সময় মতো আদালতের সামনে পৌঁছে যেতে পারেন, তার জন্য বাসের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিছু জায়গায় এমনও বলা হয়েছিল যে, সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছে। বাবার প্রবচন শুনতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁদের। যা থেকে তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে, ছকটা শুরু থেকেই ছিল প্ল্যানমাফিক।

রাম রহিমের ভক্তদের ঠেকাতে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী

ওই ভিড়েই মিশে ছিল বাবার নিযুক্ত ৫০ থেকে ৬০ জন ভাড়াটে গুন্ডা। ঘটনার আগে থেকেই ওই চত্বরে বেশ কিছু গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ডিকি ভরে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার, একে-৪৭, বোমা, রিভলভার, কার্তুজ, কেরোসিনের জার। অস্ত্র নিয়ে বার্তা পাওয়ার অপেক্ষায় তৈরিই ছিল গুন্ডাবাহিনী।

রাম রহিমের ধৃত ৮ রক্ষীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ ও খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছে। রোহতক জেলে তাঁর সাজা ঘোষণাকে ঘিরে যাতে কোনও রকমের অশান্তি না ছড়ায়, সেই জন্য বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২৯ অগস্ট পর্যন্ত হরিয়ানায় বন্ধ মোবাইল-ইন্টারনেটও। গোটা রোহতকই এখন বকলমে সেনার হাতে।

তবে তার রায় হওয়ার পর খুশি হয়েছে দার্জিলিং বাসী। কারন দার্জিলিংবাসী তাকে সবার আগে চিনতে পারে ও তাকে আন্দোলন করে বের করে দেয় সেখান থেকে।