মুখ খুললেন সালমানের শ্বশুড়, বেড়িয়ে এল আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য !

244

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর  ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় রহস্যজনক মৃত্যু হয় ঢাকাই ছবির অমর নায়ক সালমান শাহের। পরিবার ও ভক্তরা সালমানকে খুন করা হয়েছে দাবি করে আন্দোলন করে খুনিদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ ২১ বছর ধরেই। এরই মাঝে এক আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি রাবেয়া সুলতানা রুবি অনলাইনে একটি বোমা ফাটানো ভিডিও বার্তা ছেড়ে বলেছেন, সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে। সেই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারই স্বামী। চীনাদের দিয়ে এই খুন করানো হয়। এতে জড়িত ছিল সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার পরিবারও।

সামিরার বাবা শফিকুল হক হীরা এসব তথ্যকে অবান্তর বলে দাবি করে এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমিও দেখেছি। এটা খুবই হাস্যকর লেগেছে আমার কাছে। আমি জেনেছি রুবি তার স্বামীর সঙ্গে নেই। ওদের ডিভোর্স হয়েছে। শেষ বয়সে অর্থকড়ির ঝামেলায় আছে হয়তো। কারণ ডিভোর্সের সময় স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিতে পারেনি, তার ও পুত্রের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেনি। এজন্য মাথা হয়তো বিগড়ে গেছে। কিন্তু তার দায় তো দেশ ও জাতি নেবে না।’

তিনি ভিডিও প্রকাশকারী রুবিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘ও নিঃস্ব অবস্থায় আছে। তাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যা খুশি তাই করছে। হতে পারে সালমানের মা ওকে টাকার লোভ দেখিয়ে থাকতে পারে। সেজন্যই একটা পুরনো ইস্যুকে নতুন করে রঙ মাখিয়ে হাজির করেছে।’

তিনি সালমানের মৃত্যুর ব্যাপারটা রুবির দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ও নিজেই তো এই মামলার আসামি। ঘটনার শুরু থেকেই সে সমালোচিত সালমান খুনের সঙ্গে। কিন্তু বরাবরই সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছে। সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করে সালমানের মাকে কটাক্ষ করেছে। তবে নতুন করে কেন সে এসব মিথ্যাচার করছে সেটা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন।’

তবে রুবির দাবি ছিল সালমানের মৃত্যুর পেছনে সামিরা ও তার পরিবার জড়িত ছিল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হীরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করে বলেন, ‘এটাকে পাত্তা দেয়ার মতো কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আমার মেয়ে বা আমার পরিবার এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ, বহু আগেই আদালত এটা প্রমাণ করেছেন যে সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিল। সুতরাং খুনের প্রসঙ্গই আসে না। রুবি হয়তো কোনো কারণে ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে আমাদের।’

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক হীরা আরো বলেন, ‘সালমানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সালমানের মা অকারণেই আমার মেয়ে ও পরিবারকে অপমান করার চেষ্টা করেছে। আদৌ এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এটা প্রমাণিত’।

এসব ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে হীরা ফাস করেছেন নিজেদের ব্যাক্তিগত কিছু তথ্য। তিনি বলেন, আমাদের কাছের মানুষ যারা তারা সবাই জানেন যে সালমান প্রচণ্ড ভালোবাস তো সামিরাকে। সে সামিরার সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিল বরাবরই। তারই সামনে ১৯৯৫ সালে শাহরুখ খান সামিরাকে বলিউডে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। সে আমার মেয়েকে নিয়ে গর্ব করত।

আর আমরাও সালমানকে প্রচণ্ড আদর করতাম। কারণ ও শুধু আমাদের জামাই ছিল না, সালমান ছিল আমার বন্ধুর পুত্র এবং আমার স্ত্রীর বান্ধবীর পুত্র। ও তখন অনেক জনপ্রিয় নায়ক হলেও খুব বেশি টাকা কিন্তু আয় করত না।

আমাকে প্রায় সময়ই চট্টগ্রাম থেকে ৬০ হাজার, এক লাখ করে টাকা পাঠাতে হতো। আমি পাঠাতামও সন্তান মনে করেই। কেন সে আত্মহত্যা করল সেটা অজানাই এবং আফসোসের। তবে আমার মেয়ে ও আমার পরিবার থেকে কোনোদিন ভালোবাসার কমতি ছিল না সালমানের জন্য।’

নিজের পরিবারকে নির্দোষ দাবি করে শফিকুল হক হীরা আরও বলেন, ‘আমি বা আমার পরিবার যদি মেয়ের জামাই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতাম তবে যে বছর সালমান মারা গেল সেই বছরই সাবের হোসেন চৌধুরী আমাকে সরকারিভাবে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পুরস্কৃত করতেন না। আমিও সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে আজ অবধি জড়িত থাকতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন আমি কেমন। এই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আমার কী অবদান’।

বাংলার অমর নায়ক সালমানের মৃত্যু রহস্যের ব্যাপারটি সালমানের মায়ের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে সালমানের মা নিজেও গিয়েছিলেন ছেলে হত্যার শাস্তি চাইতে। কিছু হয়েছে? হয়নি। কারণ, একটা আত্মহত্যাকে জোর করে হত্যা বলে প্রমাণ করা যায় না। আর প্রধানমন্ত্রী জানতেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী কেমন। স্বৈরশাসক এরশাদের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন নীলুফার চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরী সেই কথা কারো অজানা নয়।’

একই প্রসঙ্গে এই প্রবীণ ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘সালমানের বাবা ছিল আমার ক্লাসমেট। খুব ভালো বন্ধু ছিল আমার। ও ছিল ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট। ছেলের মৃত্যু নিয়ে সে খুব আপসেট ছিল। আমরা একে অপরকে শান্ত্বনা দিয়েছিলাম। সে চেষ্টা করেছিল সালমানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে। কিন্তু পারেনি তার স্ত্রীর জন্য। সালমানের মা নীলা চৌধুরীর স্বভাব-চরিত্র নিয়ে সেইসময় অনেক সমালোচনা হতো সবখানে। সালমান খুনের সঙ্গে তার মায়ের নামেই চলে আসছিল। নিজের সমালোচনার জন্যই নীলা চৌধুরী ছেলের খুনের মামলা করেও খুব একটা গুরুত্ব পাননি।’

নিজেদের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে এই ক্রীড়া সংগঠক বলেন, ‘আমার স্ত্রী বর্তমানে চীন ও আমেরিকায় নানা রকম ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আমার মেয়ে সামিরাকে আমরা দ্বিতীয়বার ভালো ঘরের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছি। সেই সংসারে সুখে আছে সে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ও আমার পরিবারের ভাবমূর্তি কম ক্ষুণ্ন হয়নি। এই সময়ে এসে এইসব বাতিল বিতর্কে আমি আর কান দিতে চাই না। পাগলে অনেক কিছুই বলবে। তাতে কী আসে যায়।’

তবে সালমান শাহ এর শ্বশুরের করা এত ভারি ভারি মন্তব্যের জবাবে সালমানের মা নীলা ৌধুরী এখন পর্যন্ত কিছু বলেন নি।