বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান। বলিউড কাপিয়ে দেশের সীমা পেরিয়ে তিনি হলিউডেরও অনেক সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন। তিনি বাংলাদেশের ‘ডুব’ সিনেমাতেও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। এই গুনী অভিনেতা বর্তমানে জটিল রোগে ভুগছেন। গতকাল একটি টুইট বার্তায় তিনি জানান, তিনি নিউরো এন্ডোক্রিন টিউমারে আক্রান্ত। অর্থাৎ তার স্নায়ুতে টিউমার হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে যখন ভক্ত ও দর্শকরা চিন্তিত, তখন একজন চিকিৎসক এই অসুস্থতা নিয়ে জানালেন এক তথ্য।
ইরফানের এই রোগ সম্পর্কে শ্রী গঙ্গারাম হাসপাতালের সার্জিকাল গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজি ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান ড. সুমিত্রা রাওয়াত এক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘নিউরো এন্ডো কোষ আমাদের দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। সেই কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন সেটি নিউরো এন্ডোক্রাইন টিউমারে পরিণত হয়। কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ধীরে ধীরে পরিণত হয় টিউমারে। এ ধরনের টিউমার সাধারণত ইন্টেসটাইন, ফুসফুস, প্যানক্রিয়াস, থাইরয়েড ও অন্য অংশেও দেখা যায়।’
সুমিত্রা আরও বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে টিউমারটি কোথায় হয়েছে, আকার কেমন, এর মিটোটিক সূচক কী বলছে ইত্যাদির ওপর। টিউমারের স্থান অনুযায়ী সেটাকে অস্ত্রোপচার করা যায় এবং সেরে ওঠার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তবে একবার অস্ত্রোপচার হলে রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হয়।’
এদিকে বেশ কয়েক দিন ধরে ইরফান খানের ক্যান্সার ও টিউমার হওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে বলিপাড়ায়। এরপর অভিনেতার স্ত্রী গুজব ছড়াতে মানা করে জানান তাদের জন্য প্রার্থনা করার জন্য। অবশেষে নীরবতা ভেঙে ইরফান নিজে টুইট করেন তার অসুস্থতা নিয়ে।
মেধাবী বলিউড ও হলিউড অভিনেতা ইরফান তার টুইটে লিখেছেন, ‘অপ্রত্যাশিত কিছু আমাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। বিগত কয়েক দিনে সেটাই হচ্ছে। খুব একটা ভালো অবস্থায় টিউমারটি নেই। তবে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা পাশে রয়েছেন বলেই তাদের দেখে লড়াইয়ের সাহস পাচ্ছি। নিউরো এন্ডোক্রিন টিউমারের চিকিৎসা চলছে, যেটি খুবই জটিল। কিন্তু আমার চারপাশে যে ভালোবাসা ও শক্তিরা আছে, সেখান থেকে আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
এই অসুস্থতার কারণে আমাকে দেশের বাইরে যেতে হবে। যে গুজব চলছে তাতে সবসময় মনে করা হয়, নিউরো মানে মস্তিষ্ক। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে তা নয়। এ নিয়ে গবেষণা করার সবচেয়ে সহজ পথ গুগলে খোঁজ করা। যারা আমার লেখার জন্য অপেক্ষা করে আছেন, আশা করি তাদের জন্য আমি আরও সংবাদ নিয়ে ফিরে আসব। প্রত্যেকের কাছে আমার অনুরোধ, সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।’
এদিকে জানা গেছে, ‘নিউরো’ শব্দটি জড়িত থাকলেও এই টিউমারটি মূলত মানব শরীরের অন্ত্রেই হয়ে থাকে। এই টিউমারের কারণে ক্যান্সারও হতে পারে। একে কারসিনয়েড টিউমার বলা হয়ে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এটি। এর প্রভাবে বারবার মলত্যাগ, ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, তলপেটে প্রবল ব্যথা হতে পারে। জটিল হলেও এর চিকিৎসা রয়েছে। সময়ের মধ্যে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা বের করে নেওয়া যেতে পারে। আর প্রয়োজনে কেমোথেরাপি দেওয়া হতে পারে।