পুজোর ছবির রিলিজ নিয়ে দেব ও শ্রীকান্তের লড়াই!

377

টলিউড তারকা দেব গত লোকসভা ভোট থেকেই রাজ্যে শাসক দলের প্রচারে অন্যতম প্রধান মুখ। তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তাঁকে ভোটে দাঁড় করাতেও উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর ছবি রিলিজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন, শাসক দলের সাংসদ সেই দেবই।

অভিযোগ পাওয়া যায়, দেবের ছবির শোয়ে বাগড়া দিচ্ছেন তিনিই, যিনি জনপ্রিয় নায়ককে রাজনীতিতে টানতে তখন কলকাঠি নেড়েছিলেন। এবার পুজোয় একগুচ্ছ বাংলা ছবির মধ্যে শাসক-ঘনিষ্ঠ ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর দু’টি ছবি রয়েছে। ওই প্রযোজকেরা বরাবরই নিজেদের ছবি থাকলে প্রভাব খাটিয়ে অন্য ছবিগুলিকে কোণঠাসা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ইন্ডাস্ট্রির এক নামী পরিচালকের কথায়, ‘‘দেব নিজে প্রযোজক হওয়ায় ভেঙ্কটেশের স্বার্থে ঘা লাগছে। তাঁর ছবির জোরদার প্রচার দেখেই তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে।’’ কলকাতার তিনটি সিঙ্গলস্ক্রিন হলেও দেবের ‘ককপিট’-এর মুক্তি হঠাৎ কেঁচে গিয়েছে বলে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর পাওয়া যায়।

ব্যারাকপুরের একটি হলেও ঘটেছে একই ঘটনা। অনেক হলেই ভেঙ্কটেশের ‘ভয়ে’ দেবের ছবির শো পেতে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে দেবকে ফোন ও টেক্সট করে সাড়া পান নি কেউ। ভেঙ্কটেশ-কর্তা শ্রীকান্ত মোহতাও সাড়া দেননি। তবে শাসক দলের একাংশের মতে, দলের অন্দরে দেবের নম্বর কাটা গিয়েছে বলেই তাঁর ছবির উপরে প্রভাব পড়ছে।

টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সংস্থার মাথা স্বরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে বিলেতে মাস দুয়েক আগে একটি বাংলা ছবির শ্যুটিং ভণ্ডুল হওয়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন দেব। এমন জুলুমবাজি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে নেতিবাচক বলেই তিনি আক্ষেপ করেন। টালিগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপের বিরুদ্ধে দেবের এই অবস্থানে, নেত্রী খুশি হননি বলে শোনা যায়।

তা ছাড়়া, সাংসদ দেবের এলাকা বন্যাকবলিত ঘাটালেও তাঁর সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি নিয়ে কোনও কোনও মহলে সমালোচনা হয়েছিল।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনাতেও সম্প্রতি দেবের প্রতি দল ততটা সহানুভূতিশীল নয় বলে আভাস মিলেছে। নবীন-বরণ অনুষ্ঠানে তাঁর নতুন ছবির দুই নায়িকা কোয়েল ও রুক্মিনীকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল দেবের। বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে যুক্তি দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে দলের তরফেই দেব ও তাঁর নায়িকাদের অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়।

জনৈক পরিচালকের কথায়, ‘‘ছবির শো নিয়ে সাংসদ-নায়ক দেব ও প্রযোজক শ্রীকান্তের টক্করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইটাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকট হয়ে গেল।’’

শাসক দলে দেবের বিরাগভাজন হওয়াটা নেতৃত্ব স্বীকার করছে না। তবে ভিতরে ভিতরে অনেকেই মানছেন, গোটা টলিউডকে তৃণমূলের ছাতার তলায় রাখতে প্রভাবশালী প্রযোজককে হাতে রাখাটা রাজনৈতিক দায়। দেব প্রযোজক হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে খানিক ঠান্ডা লড়াই চলছে শ্রীকান্তদের। ব্যাপারটা এখন কোন পর্যন্ত গড়ায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।