রেল লাইনের ওই বস্তিতে, জন্মেছিল একটি ছেলে
মা তার কাদে, ছেলেটি মরে গেছে
হায় আমার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ…
বাংলা পপ সংগীতের ‘গুরু’ আজম খানের জন্মদিন আজ বুধবার। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন এ গায়ক। স্বাধীনতার পর সহযোদ্ধারা ফিরে যান নিজ নিজ পেশায়। কিন্তু তরুণ আজম খান নেমে পড়েন অন্য এক উন্মাদনায়। গানে গানে তারুণ্যের রক্তে তুলেন উম্মাদনা। জন্মদিনে ভক্তরা স্মরণ করছে তার কীর্তি। যদিও বিশেষ এ দিনকে ঘিরে নেই তেমন কোনো আয়োজন।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার আজিমপুরে আজম খানের জন্ম। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবার নাম আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। তারা ছিলেন ৪ ভাই ও এক বোন।
আজম খান সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরই মাঝে শুরু হয় গণ আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানকালে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন আজম খান। ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। সেকশন কমান্ডার হিসেবে আজম খান ঢাকা ও আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন।
আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশন তিতাস’। তাদের দায়িত্ব ছিল ঢাকার কিছু গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার মাধ্যমে বিশেষ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও হোটেল পূর্বাণীর গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো। তাদের লক্ষ্য, ঐ সকল হোটেলে অবস্থানরত বিদেশিরা যাতে বুঝতে পারে যে দেশে একটা যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে তিনি তার বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যা পরবর্তীতে তার শ্রবণক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়।
১৯৮২ সালে ‘এক যুগ’ নামে আজম খানের প্রথম অ্যালবাম বের হয়। তার প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিং-এর প্রযোজনায়। ১৭টি একক অ্যালবামসহ বেশ কিছু মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ হয় পপগুরুর। জনপ্রিয় গানের মাঝে উল্লেখযোগ্য— চুপ চুপ অনামিকা চুপ, অভিমানী তুমি কোথায়, একদিনতো চলে যাবো, আমি যারে চাইরে, জীবনে কিছু পাবো নারে, আসি আসি বলে তুমি আর এলেনা, ও চাঁদ সুন্দর চাঁদ, হারিয়ে গেছো খুঁজে পাবোনা, ঘুম আসে না ইত্যাদি।
২০১০ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হন আজম খান। ২০১১ সালের ৫ জুন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। শুভ জন্মদিন সত্যিকারের যোদ্ধা আজম খান।