মোশাররফের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে তসলিমার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া!

112
ছবিঃ সংগৃহীত

সম্প্রতি ‘জাগো বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানাতে গিয়ে উল্টো নিজেই সমস্যার মুখে পড়লেন ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় তারকা মোশাররফ করিম। পর্দা ও ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন তিনি। অবশেষে নিজের ফেসবুকে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন এই অভিনেতা। পাশাপাশি তার মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এবার তার ক্ষমা চাওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে উল্টো সমালোচনা।

এদিকে তার মন্তব্য ও এরপর ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি আজ শনিবার (২২ মার্চ) লিখেছেন, ‘মোশাররফ করিম বাংলাদেশের টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনি সেদিন কিছু কথা বলেছেন স্টুডিওর দর্শকদের উদ্দেশে। মেয়েদের যৌন হেনস্থার জন্য পোশাক নাকি অন্য কিছু দায়ী! যা বললেন তা এমন কোনও বিপ্লবী কথা নয়। পোশাক যদি দায়ী, তাহলে ৭ বছর বয়সী মেয়ে কি কোনও যৌন উত্তেজক পোশাক পরে যে তাকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়? বোরখা পরা মহিলাই বা কী কারণে যৌন হেনস্থার শিকার হয়? মোশাররফ বললেন, মেয়েদের পোশাক নয়, পুরুষের নোংরা অন্তরই ধর্ষণের জন্য দায়ী। সুতরাং অন্তরের ময়লা দূর করতে হলে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে, এই যুদ্ধের আরেক নামই জিহাদ। যদিও মোশাররফ জিহাদের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা নবী মোহাম্মদের ব্যাখ্যা নয়। নবী মোহাম্মদ দারুল ইসলাম বানানোর জন্য উম্মতদের হুকুম দিয়েছেন বিধর্মীদের মারার। মানুষকে কুপিয়ে মেরে ফেলা যখন সভ্য জগতে সমালোচিত হচ্ছে, তখনই ইসলামের পন্ডিতেরা বুদ্ধি করে বলেছেন, নিজের ভেতরের খারাপ মানুষটা বা খারাপ মানসিকতাটার বিরুদ্ধে সংগ্রামের আরেক নামই জিহাদ। মোশাররফ সেই ভালো মানুষী সংজ্ঞা দিয়েছেন জিহাদের। মোশাররফের মতো সাদামাটা কথাবার্তা যদি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দিয়ে থাকে, আর সেই কারণে তাকে যদি ক্ষমা প্রার্থণা করতে হয়, তাহলে তো অন্ধকার যুগ চলছে দেশে।

মোশাররফকে ক্ষমা চাইতে হলো তাদের কাছে, যারা মনে করে মেয়েদের স্বল্প পোশাকের কারণেই পুরুষেরা তাদের ধর্ষণ করে, যারা মনে করে বোরখা আর হিজাব পরে ধর্ষণ বন্ধ করতে পারে মেয়েরাই। পুরুষদের মোশাররফ পরামর্শ দিয়েছিলেন ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য।

পুরুষানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্তরা চান না পুরুষ ধর্ষণ বন্ধ করুক, তারা চান ধর্ষণ যেহেতু মেয়েদের সমস্যা, সুতরাং মেয়েদের বন্ধ করতে হবে ধর্ষণ, গা গতর ঢেকে, নিজেদের পছন্দসই পোশাক পরার স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে, নিজেদের মানবাধিকার বিসর্জন দিয়ে, নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার ক’রে।

মোশাররফ ক্ষমা চাইলেন কেন? তিনি তো ভালো জানেন যে মেয়েরা তাদের পোশাকের কারণে ধর্ষিতা হয় না। সত্য কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইতে হয় না কখনও। ক্ষমা চাইলে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র করে ফেলা হয়। নিজের ওই ক্ষুদ্র, ওই কুণ্ঠিত কুঞ্চিত রূপটি দেখতে কারোরই ভালো লাগে না।’