সালমানের সেই কথাটি এখনো কানে বাজে

368

সালমান শাহ হত্যা মামলার ৭ নম্বর আসামি রুবি সুলতানা এক ভিডিওবার্তায় এটাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বক্তব্য দিলে গোটা দেশ নড়েচড়ে বসে। সালমান শাহ কে নিয়ে এবার অতীতের কিছু স্মৃতি এক সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন পরিচালক জাকির হোসেন রাজু।

তখনকার তরুণ পরিচালক জাকির হোসেন রাজু সালমান শাহকে নিয়ে ‘জীবন সংসার’ নামে একটি ছবি করেছিলেন। ছবিতে কাজ করতে গিয়ে জাকির হোসেন রাজু সালমানের সাথে অনেক স্মৃতিময় সময় পার করে ফেলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমনই কিছু স্মৃতি শেয়ার করেছেন এই নির্মাতা। এ ছাড়াও সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের বিচারও চেয়েছেন তিনি। তার লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘আমি জাকির হোসেন রাজু ’সালমান শাহ্’র যে কথা গুলো এখনো আমার কানে বাজে! এবং যে স্মৃতি গুলো এখনো আমার চোখে ভাঁসে। রোমান্টিক চরিত্রে সালমানের বিকল্প ছিল না, এখনও গড়ে ওঠেনি। রাজ্জাক ভাইয়ের পরে এ দেশের চলচ্চিত্রে একমাত্র সালমানই অভিনয়ে স্বকীয় ধরন তৈরি করতে পেরেছিল। দর্শকদের হলমুখো করতে সমর্থ হয়েছিল সে। আবার কবে, কতোদিন পরে যে সালমানের মত অভিনেতা আসবে, আমরা পাবো-সন্দেহ আছে। সালমানকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে নিজে পরামর্শ দিতো। তবুও আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থকতাম। তখন সে রাগ করতো, অভিমান করতো। আমি তো কেবল (জীবন সংসার) পরিচালক হলাম। অনেক বড়ো বড়ো পরিচালক ওর কথা শুনতো, শুনতে বাধ্য হতো। পরে আমার ছবির রাশ দেখে, ডাবিং শেষে আমাকে বলতো, ‘রাজু ভাই, আপনি ভালো পরিচালক হবেন। ‘প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ ছেলে ছিল সালমান শাহ্, বাহির থেকে সেটা বোঝাই যেতনা।

‘জীবন সংসার’-এর ১৫ নম্বর রিলে শাবনূরের বিষ খাওয়ার একটা সিকোয়েন্স আছে। শ্যুটিং করার সময় সালমান শাহ্-শাবনূর দু’জনেই দরদ দিয়ে, অনেক আন্তরিকতার সাথে অভিনয় করে। ওদের অভিনয়শৈলী গোটা এফডিসিতে সে সময় আলোড়ন তুলেছিল। খুবই ভালো করেছিল সালমান, শাবনূরও। তাদের আগ্রহ ছিল পুরো সিকোয়েন্সটা স্ক্রিনে দেখবে, ডাবিং করার সময় খণ্ড খণ্ড দেখে ওদের মন ভরেনি।

এই সিকোয়েন্সটা দেখার জন্যে সালমান ল্যাবে এসে অনেক্ষণ বসেছিল। তখনো ১৫ নাম্বার রিলটি প্রিন্ট হয়নি, বসে আছে তো আছেই ও আর ল্যাব ছেড়ে যায়না!প্রিন্টিং ও ডেভেলপে সালমান নিজে গিয়ে ওদের বলেছিল-ভাই এই রিলটা আগে করেদিন। প্রজেকশন রুমে শুয়ে শুয়ে ও পুরো রিলটা দেখে। শেষ হওয়ারসাথে সাথে এসে আমাকে জাপটে ধরে রাখে। কথা নেই, বার্তা নেই। সে কি বলতে চাইলো সে জানে, আমি কি বুঝলাম আমি নিজেও জানি না!

এরপর ল্যাব ছেড়ে সে সোজা বেরিয়ে যায়। মৃত্যুর একদিন আগে শিবলি ভাইয়ের (শিবলি সাদিক) ছবির শ্যুটিংয়ে ওর সাথে আমর শেষ দেখা হয়। ও গাড়ির উপর বসে শট দিচ্ছিল, আমি শ্যুটিং স্পটের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে গাড়ির ওপর বসেই শিবলি ভাইকে বলছিল, জিনিস ছোট হলেই খারাপ হয়না। শিবলি ভাই প্রথমে বুঝতে পারেনি। কাছে গেলে শিবলি ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, সালমান ঠিকই বলেছে। তার প্রমাণ আমি সেন্সর বোর্ডে পেয়েছি।

ওখানে আমার ছবির সেন্সর প্রিন্ট করাতে গেলে ওরা আমাকে বলেছিল-অনেক দিন পরে ভালো একটা ছবি (জীবন সংসার) দেখলাম। সালমানকে নিয়ে আমার আরেকটি ছবি করার পরিকল্পনা করছিলাম ‘জীবন  সংসার’-এর কাজ শেষ করার পরেই। সালমান তা জানতে পেরে আমাকে বলেছিল-‘আমাকে নিয়ে কাজ করার জন্যে অনেক পরিচালক, প্রযোজক ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিডিউল দিতে পারছিনা। অনেকে হয়তো ছয় মাস ঘুরেও পাবেনা, কিন্তু আপনি ঘরে বসে পেয়ে যাবেন। আমার শিডিউল আপনাকে ভূতে জোগাড় করে দিবে। আপনি যেদিন নতুন ছবি পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন সেদিনই আমার কাছে চলে আসবেন। এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমান’।

‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমান’ সালমান শাহ্’র এই কথাটি রাতে এখনো আমার কানে বাজে। যখন ওর কথা মনে পড়ে ভীষন খারাপ লাগে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওর কত স্মৃতি, মনে পড়ে ১৫ নাম্বার সিকোয়েন্সটা দেখার পরে আমাকে জাপটে ধরার কথা। আমি জাকির হোসেন রাজু ‘সালমান শাহ্’র হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি’।

সালমান শাহ যে কাজ পাগল ছেলে ছিল এটা পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর কথায় স্পষ্ট ফুটে ওঠে।