একটি সিনেমায় একজন পরিচালকের অনেক স্বপ্ন , কষ্ট এবং পরিশ্রম নিহিত থাকে। আর সেই সিনেমায় বিপুর পরিমান অর্থ লগ্নি থাকলে তা যোগ হয় জীবিকার সাথেও। কিছুদিন আগেই বিচ্ছেদ হয়ে গেলো ঢালিউডের তারকা জুটি শাকিব-অপুর। বর্তমানে কেউ কারো সাথে ছবি করা দূরে থাকে , মুখ দেখাও বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের দুজনের বিচ্ছেদের ফাঁদে আটকে গেছে অনেক প্রযোজক এবং পরিচালকের স্বপ্ন। অনেক অর্ধসমাপ্ত ছবিই আর করা সম্ভব হচ্ছে না শাকিব-অপুর এই ছাড়াছাড়ির কারণে। সেসব ছবিতে নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় নেওয়া হয়েছিল তাঁদের।
‘পাংকু জামাই’, ‘লাভ ২০১৪’, ‘মা’, ‘মাই ডার্লিং’ প্রভৃতি ছবির প্রায় ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ করেও বাকি কাজ শেষ করা যাচ্ছে না শাকিব ও অপুর কারণে। যেহেতু পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছেন, তাই বিশাল অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন এসব ছবির প্রযোজকরা। আর এ কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা করছেন অনেকে। যেমন ‘মাই ডার্লিং’ ছবির প্রযোজক মোহাম্মদ হিমেল। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষা করছি ছবিটি শেষ করার জন্য। ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ করার পর হঠাৎ অপু বিশ্বাস হারিয়ে গেলেন, তারপর কিছুতেই উনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আবার বছরখানেক পর ফিরে এলেন বাচ্চাসহ। তারপর দেখি, শাকিব খান আর অপু বিশ্বাস একে অপরের সঙ্গে কথাও বলেন না। কিন্তু আমাদের কী হবে? আমরা এই ছবির জন্য এরই মধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছি, যদি ছবিটি শেষ করতে না পারি, তবে পুরো টাকাটাই লস হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটা প্রযোজক হিসেবে আমরা মেনে নেব না, এরই মধ্যে আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী দুদিনের মধ্যে আমরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
‘মা’ ছবির পরিচালক কালাম কায়সার বলেন, ‘আমরা ছবির শুটিং শুরু করার কিছুদিন পরই দেখি অপু বিশ্বাস নিখোঁজ। তারপর তো আর শুটিং করতে পারিনি। এখন যা অবস্থা, তাতে এতটুকু বুঝতে পারছি, উনারা আর একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন না। আমরা কাজ বন্ধ করে বসে আছি। আমার প্রযোজক এর পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি আর ছবি বানাবেন না, এরই মধ্যে কয়েকজন প্রযোজক মিলে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমি শুনেছি কয়েকজন প্রয়োজক শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করবেন। আমি মনে করি, তাঁরা তা করতেই পারেন। কারণ, একটি ছবির সঙ্গে একজন প্রযোজকের কোটি কোটি টাকা যুক্ত, পরিচালকের ক্যারিয়ার যুক্ত।’
পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ‘একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীর সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা করতেই পারেন। কিন্তু চলচ্চিত্রকে ভুলে গেলে তো হবে না। আপনারা প্রেম করবেন, সন্তান জন্ম দেবেন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের ছবির কাজটি শেষ করে বাকি সব করুন। এখন আমাদের কাজের সামান্য একটু বাকি রেখে শিডিউল দিচ্ছেন না, এর মানে কী? আমি মনে করি, এদের শাস্তি হওয়া উচিত, যে কারণে মামলা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
জি সরকার পরিচালিত এই সিনেমাটি ‘লাভ-২০১৪’ নামে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। । নানা কারণে সে বছর এর দৃশ্য ধারণ শেষ করতে পারেননি নির্মাতা। তাই সিনেমাটির নাম পরিবর্তন করে পরবর্তী সময়ে ‘লাভ-২০১৫’ করা হয়। সে বছরও সিনেমাটি আলোর মুখ দেখতে পায়নি। এ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন ‘শাকিব খানের সঙ্গে দেখা করাটাই তো কঠিন। তিনি এখন প্রায় সময় দেশের বাইরে থাকেন। তার শিডিউলের কারণেই সিনেমাটির শুটিং আটকে আছে।’