অভিনেতা: আনুষ্কা শর্মা, পরমব্রত চ্যাটার্জি, রাজাত কাপুর, রিতাভরি চক্রবর্তী, মানসি মুলতানি
পরিচালক: প্রসিত রায়
ছবির ধরন: হরর থ্রিলার
সময়সীমা: ২ ঘন্টা ১৬ মিনিট
আমাদের রেটিং: ৩.৫/৫
ছবির নাম অনুযায়ী মোটেও পরীদের স্বর্গরাজ্যে নিয়ে যায় না ‘পারী’ সিনেমা। ‘পারী’ সিনেমাটির ট্যাগলাইন আমাদেরকে বলেছে এটি কোনো রুপকথার গল্প নয়। কিন্তু ‘পারী’ একটি সুপারন্যাচারাল হরর ছবি। যাই হোক, গাঁ ঠান্ডা করার মতো ভয় দেখাতে গিয়ে ছবির কাহিনি খুব দ্রুত গড়ে উঠেছে এবং ধড়াস করে ইতি টেনেছে। ছবিটি দেখে গাঁ-হিম করার মতো হরর নাও মনে হতে পারে। মূল ঝামেলাটা হচ্ছে চিত্রনাট্যে। একদম শুরু থেকেই এবং প্রায় দৃশ্যেই রয়েছে অন্ধকার যা দর্শকদের বিরক্ত করে তুলবে। রক্তের ছড়াছড়ি, শয়তানের দুষ্ট খেলা, ব্ল্যাক ম্যাজিক, শিকলে বাধা এক নারী সব মিলিয়ে গুনগত মানের ক্ষেত্রে ঘাম ঝরানো হরর মুভি বলাটা দুঃসাহসের ব্যাপার। তবে এই দুই ঘন্টার জার্নি খুব একটা হরর না হলেও আপনাকে অন্তত পর্দা থেকে চোখ ফেরাতে দিবে না।
হিন্দি হরর মুভি গুলোতে প্রায়ই তাদের ভয়ঙ্কর অভিনয়ের সঙ্গে কমেডির সংমিশ্রন ঘটিয়ে ফেলে। ট্র্যাডিশনাল হিন্দি হরর মুভি গুলোতে আস্তে আস্তে দরজা খোলার শব্দ, ভয়ঙ্কর মেলোডিয়াস ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, অতিরিক্ত মেকাপ মাখা মুখোশধারী ভূত এসব থেকে ‘পারী’ সম্পূর্ন আলাদা। সেই অংক কষতে গিয়ে ‘পারী’কে অনেকে ইন্ডিয়ার কনজুরিং এর সাথে তুলনা করে ফেলেছেন।
অর্নব (পরমব্রত চ্যাটার্জি) মানসিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত চূর্ণ-বিচুর্ণ, উষ্কখুষ্ক এক মেয়ে রুখসানা (আনুষ্কা শর্মা) কে রহস্যজনক এক জঙ্গলে খুজে পায় এবং আশ্রয় দেয়। দুর্ঘটনাবশত অর্নব (পরমব্রত চ্যাটার্জি) এক বৃদ্ধ নারীর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় যত ভুতুড়ে কান্ড। তবে আনুষ্কা শর্মা অসাধারন অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় ড্রেসআপ-মেকাপ সব মিলিয়ে চোখে মুখে সবসময়ই যেন আতঙ্কের ছাপ। পর্দায় যখন আনুষ্কা রয়েছে ততক্ষন এক সেকেন্ডের জন্যও আপনি হয়তো আপনার চোখ সরাতে পারবেন না। ছবির কাহিনীর বাজে দিকগুলোর সবকিছুই আনুষ্কার অভিনয় দিয়ে ছাপিয়ে গেছে। বিশেষ করে একটি হেডফোনের দৃশ্য ইন্ডিয়ান হরর চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সেরা সিকোয়েন্সগুলোর মধ্যে একটি। অন্যদিকে, পরমব্রত নিজেও একজন পশ্চিম বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনিও প্রচন্ড নৈপুন্যতার সঙ্গে তার অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের চাহিদাপূরন করার যথার্থ চেষ্টা করেছেন।
অবশ্য হরর মুভি বলে কথা, কাহিনী বলে স্পয়লার করাটা একদমই অনুচিত হবে। তাই পুরো কাহিনী জানতে হলে আপনাকে পুরো মুভিটি দেখতে হবে। কেননা কোন দৃশ্যে রুখসানা (আনুষ্কা শর্মা) আপনার ঘাড় মটকাবে সেটা আগেই বলে দিলে হরর মুভির কোনো থ্রিল থাকবে না। কুৎসিত ভূত, তন্ত্র-মন্ত্র, কমেডি এসব থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ন নতুন ধাচের হরর সিনেমা দিয়ে পরিচালক প্রসিত রায় খুব সুন্দর অভিষেক করেছেন।