অভিনেতাঃ অক্ষয় কুমার, রাধিকা আপ্টে, সোনম কাপুর

পরিচালকঃ আর বালকি

ছবির ধরনঃ ড্রামা

সময়সীমাঃ ২ ঘন্টা ২০ মিনিট

পরিবর্তনের জন্য পাগলামিটা হয়ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘প্যাডম্যান’। প্যাডম্যান দেখার পর হয়ত আপনার ভাবনাটা এরকমই হবে। আমরা ‘সুপারম্যান’ দেখেছি ‘স্পাইডারম্যান’ দেখেছি তবে এবার সিনেমা জগতে আমরা নতুন এক সুপার হিরো ‘প্যাডম্যান’-কে দেখব। কিন্তু কে এই ‘প্যাডম্যান’? পর্দায় অক্ষয় কুমারকে ‘প্যাডম্যান’ হিসেবে দেখলেও বাস্তব জীবনের অরুণাচলম মুরুগানান্থমের জীবনী নিয়ে তৈরি ‘প্যাডম্যান’ দিয়ে অক্ষয়ের যাত্রা। কোয়েম্বাটোরে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে কম দামে মহিলাদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করেন অরুণাচলম। অনেকের বাকা চোখ, অপমান, ব্যাঙ্গাত্নক কটুক্তি, বিরোধিতা উপেক্ষা করে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। তবে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রদেশের প্রেক্ষাপটে।

ঘটনাটি ১৯৯৮ সালের দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডুতে। ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ, নাম অরুনাচালাম। বিয়ে করলেন শান্তি নামের এক মেয়েকে। বিয়ের কিছুদিন পরেই অরুনাচালাম লক্ষ্য করলেন, তার স্ত্রী মাসিকের সময় কোন নিরাপদ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করে পুরনো কাপড় ব্যবহার করে, যা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত না। স্ত্রী গায়ত্রির (রাধিকা আপ্টে) পিরিয়ড নিয়ে নানা সমস্যা দেখে তাঁকে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করেন লক্ষ্মীকান্ত চৌহান (অক্ষয় কুমার)। কিন্তু প্যাডের দাম বেশি হওয়ায় গায়ত্রি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এরপর থেকেই মনে দাগ কাটে লক্ষ্মীকান্তের (অক্ষয় কুমারের)। মহিলাদের প্রতি মাসের এই সমস্যার কথা ভেবে তিনি বিমর্ষ হন এবং এই সমস্যা সমধানের জন্য নিজেই উদ্যোগ নেন। তৈরি করেন সস্তার স্যানিটারি প্যাড। কিন্তু তার পর?

প্রথমে প্যাড বানানোর ব্যাপারটি শুধু মাত্র নিজের স্ত্রীকে ভালবাসার তাগিদে হলেও পরে ব্যাপারটি তার কাছে একটি দৈনন্দিন কাজের তালিকায় জায়গায় চলে গেল। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল মাসিক তো প্রতিদিন হয় না, সেটার জন্য তাকে ১ মাস অপেক্ষা করতে হয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আরও মেয়েদের খুঁজবেন পরীক্ষা চালানোর জন্য। কিন্তু এই গ্রামে কেউ তাকে পজিটিভভাবে নেবে না, উল্টো পাগল কিংবা চরিত্রহীন পুরুষও ভাবতে পারে! তাহলে? তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই এই প্যাড পরে টেস্ট করবেন!

যে-ই ভাবা, কাজ শুরু! নিজে টেস্ট করার জন্য নিজের জন্য মেয়েদের ইউটেরাসের মতো একটা সিস্টেম তৈরি করলেন, আর সেখানে বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত দিয়ে বা বিভিন্ন সময় রং ব্যবহার করে প্যাডটা ভেজানোর প্ল্যান করলেন। এভাবেই তিনি রাস্তায় চলাচল করা শুরু করলেন, কিন্তু কিছুদিনেই আশেপাশের মানুষ ব্যাপারটা বুঝে ফেলে এবং সবাই তাকে ব্যাঙ্গ করা শুরু করে।

এর পরের ঘটনা জানতে হলে আপনাকে পুরো ছবিটা দেখতে হবে। একই সঙ্গে বিনোদন, সচেতনতার প্রসার এবং মানুষকে ভাবানো কঠিন কাজ। তাই ছবিতে মাঝে মধ্যে একটু ছন্দের অমিল পরিলক্ষিত হয়েছে। পরিসংখ্যান নিয়ে একটু বেশির জোর দিয়েছেন পরিচালক। তার ফলে সিনেমাকে জনসচেতনতা প্রসারের বিজ্ঞাপনও মনে হতে পারে। এ কারণেই সিনেমার গতি একাধিক ক্ষেত্রে বাধা প্রাপ্ত হয়েছে। তবে অভিনয় দিয়ে এ সব ঢেকে দিয়েছেন অক্ষয় কুমার, রাধিকা আপ্টে এবং সোনম কাপুর। এ ছাড়াও ছোট ছোট অন্যান্য চরিত্রে খুব ভালো অভিনয় করেছেন সকলে।

রাধিকার অভিব্যক্তি এক একটি দৃশ্যে এতটাই ভালো যে আপনি পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারবেন না। অক্ষয় কুমারকে নিয়ে যত বলা যায় ততটাই কম হবে তার জন্যে। তিনি এক কথায় সুপারহিরো। এই সময়কার কোনও হিরো গোলাপি রঙের মহিলাদের অন্তর্বাস এবং স্যানিটারি প্যাড পরে অভিনয় করবেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সিনেমাটি দেখার পর বহু মহিলা তাঁদের ট্যাবু ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। আর এটাই এই সিনেমার সবচেয়ে বড় সাফল্য।

‘প্যাডম্যান’ মুভির আমাদের রেটিং: ৩.৫/৫