২৫ হাজার থেকে সালমান শাহ যেভাবে হলেন দশ লাখ টাকার নায়ক

846

বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহ এসেছিলেন মেঘের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সূর্যের একটু খানি ঝলকানির মতো। মাত্র ২৭ টি ছবি করেই তিনি বনে গিয়েছিলেন সুপারস্টার।

কিন্তু ক্যারিয়ারের মাত্র ৪ বছরেই নিভে গেল সেই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তবে থামেনি সেই আলোর ঝলকানি। ১৯৯৬ সালের আজকের এই দিনে রহস্যজনক মৃত্যু হয় সালমানের। তার স্ত্রী সামিরার দাবি আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি, গলায় ফাঁস দিয়ে। কিন্তু সালমানের পরিবার এটিকে খুন দাবি করে সামিরাকে তুলে খুনীর কাঠগড়ায়। ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সালমানের পরিবার ও ভক্তরা খুনের দাবিতেই অটল।

দীর্ঘ ২১ বছরের নিরবতা শেষে সালমানের স্ত্রী সামিরা এক গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন । সেই সাথে বলেছেন সালমান শাহ কিভাবে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন নতুন মুখ থেকে এত অল্প সময়ে সবচেয়ে দামী নায়কে পরিনত হয়েছিলেন। তিনি জানালেন, স্বামীকে কখনোই তিনি সালমান নামে ডাকতেন না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইমন নামেই সম্বোধন করেছেন। তিনি আরও জানালেন, সালমানের প্রথম ও শেষ পারিশ্রমিকের কথাও।

সামিরা বলেন, ‌‘শোবিজে কাজ করা নিয়ে ইমনের অন্য রকম আগ্রহ ছিলো। শুরুর দিকে সে র‌্যাম্পে হেঁটেছে। তেমনই একটি ফ্যাশন শোতেক অংশ নিতে গিয়ে আমার সঙ্গে পরিচয় ও সেই সূত্রে প্রেম-বিয়ে। অনেকদিনের সংগ্রামে ১৯৯২ সালের মাঝামাঝিতে ইমন চলচ্চিত্রের অভিনয়ের প্রস্তাব পায়। অবশেষে সেই বছরের ৩ আগস্ট মহরতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইমন সিনেমার নায়ক হিসেবে যাত্রা করলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে।’

সালমান শাহ এর পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, ‘প্রথম ছবিতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলো ইমন। তবে ছবিটি মুক্তি পাবার পর আকাশ ছোঁয়া সাফল্য পায়। জনপ্রিয় হয়ে যায় ইমন-মৌসুমী জুটিও। সবখানেই তাদের চাহিদা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে পারিশ্রমিকও।

সেই ধারাবাহিকতায় শাবনূরের সঙ্গে ‘তুমি আমার’ ছবির জন্য প্রথমবারের মতো ১ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেয় সে। এরপর বেশ লম্বা একটা বিরতি শেষে আবারও ‘দেনমোহর’ সিনেমায় ইমন ও মৌসুমী একসঙ্গে অভিনয় করে। সেই ছবিতে দেড় লাখ টাকা নেয় ইমন। এগুলো যখন সুপার-ডুপার হিট করে তখন ধীরে ধীরে তার পারিশ্রমিকও বেড়ে যায়। সর্বশেষ ছটকু আহমেদের ‘বুকের ভেতর আগুন’ সিনেমার জন্য সে দশ লাখ টাকা নিয়েছিলো।

এই পারিশ্রমিকে ইমন হয়ে উঠেছিলো সবচেয়ে দামি নায়ক। আরও বেশ কিছু ছবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। সেগুলোতে পারিশ্রমিক আরও বাড়তো। তারমধ্যে একটি ছবি ছিলো সে সময়ের নতুন মুখ পপির বিপরীতে। কিন্তু চির অভিমানী ইমন হঠাৎ করেই সব পারিশ্রমিকের বাইরে চলে গেল। তার পারিশ্রমিক এখন কেবলমাত্র ভক্তদের ভালোবাসা।’

সামিরা আজ দুপুরে এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যে ইমন আমাকে তার সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছে সেই ইমনের ভক্তরাই আজ মুখরোচক গল্পে মজে গিয়ে কোনো প্রমাণ, যুক্তি ছাড়াই আমাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। সেই আমাকে নিয়েই নোংরা গল্প ছড়ানো হয়েছে। এটা আমার জন্য কতো বড় বেদনার তা কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না। ইমন কী কখনো এটা মেনে নিতো? কোনোদিন না।

যারা আজ ইমনের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ি করছেন তারাও সেটা ভালো করে উপলব্দি করেন। আমার আফসোস, ইমন বেঁচে থাকতে দেখে যেতে পারলো না কী জনপ্রিয়তাই না সে অর্জন করেছিলো। এটা উপলব্দি করলে সে এভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে পারতো না।’

সালমানের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে সামিরা বলেন, ‘আপনারা সালমান শাহকে ভালোবাসুন। কিন্তু ইমন নামটি নিয়ে সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। তার জন্য এখন দোয়াই অনেক বেশি প্রয়োজন এবং সেটাই হবে ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া ইমনের সেরা উপহার’।

সালমান শাহ এর মৃত্যুর ২১ বছর পরও আজও সালমান শাহ বাংলা ছবির দর্শকের কাছে আবেগর নাম, রুপালি পর্দার ভালোবাসার রাজ্যে স্বপ্নের রাজকুমারের নাম।