অভিনেতাঃ শাকিব খান, শুভশ্রী গাংগুলী, রজতাভ দত্ত, আশিস বিদ্যার্থী
পরিচালকঃ জয়দীপ মুখার্জি
ছবির ধরনঃ ফ্যামেলি ড্রামা/কমেডি
সময়সীমাঃ ২ ঘন্টা ৩৯ মিনিট
আমাদের রেটিং: ৩.৫/৫
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর অবশেষে বাংলাদেশে মুক্তি পেলো শাকিব খানের চালবাজ। ট্রেলার আর গানের ঝলকে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ চরম পর্যায়ে থাকেলও কোন এক অশুভ কারণেই দেরি হচ্ছিলো সিনেমাটি মুক্তি পেতে। অবশেষে কোন প্রকার উৎসব ইভেন্ট ছাড়াই মুক্তি পেল চালবাজ। তবে শাকিব খান যে নিজেই সিনেমা দিয়ে বাঙালিদের উৎসবে মাতাতে পারেন তা আবারো প্রমাণিত। শাকিবের এন্ট্রি থেকে শুরু করে প্রতিটি পাঞ্চ লাইনে দর্শকদের উল্লাসে ফেটে পড়া তারই প্রমান করে। তারই সাথে হাউজ ফুল সিনেমা হলে সমান তালে চলে দর্শকদের সিটি আর করতালি। পুরো ছবিটি দেখার পর সিনেমাটি নিয়ে কলকাতার গণমাধ্যমে করা সমালোচনা অনেকটা অযৌক্তিক এবং প্রতিহিংসা পরায়ন মনে হতে পারে।
নাম থেকেই অনুমান করা যায় ‘চালবাজ’ অনেকটা কমেডি ঘরানার ছবি হবে। তবে ছবিটিতে কমেডির সাথে অ্যাকশন ও রোমান্টিক দৃশ্যগুলোর সুন্দর রসায়ন ঘটিয়েছেন কলকাতার বিখ্যাত নির্মাতা জয়দীপ মুখার্জি। কাকার বাড়িতে বড় হওয়া শ্রীজাতার (শুভশ্রী) বিয়ে ঠিক করা হয় তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে থামিয়ে দিয়ে। ছোট বোনের সাহায্য নিয়ে বিয়ের রাতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে লন্ডনের প্রেমিকের কাছে গিয়ে উঠেন শ্রীজাতা। কিন্তু বিধি বাম। লন্ডন গিয়ে জানতে পারেন সেই ছেলেটির অন্য মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক আছে। বিয়ে এবং বিদেশে পড়ালেখার স্বপ্ন দুটোই ভেঙে যায় শ্রীজাতার। এমন সময়েই তার পরিচয় হয় সবকিছুতে সেটিংবাজ রাজার (শাকিব) সঙ্গে। টাকার বিনিময়ে সব কাজ করতে পটু রাজার ফেভারেট লাইন রাজা ফর সেল। শ্রীজাতা ও নিজের পারসোনাল লাইফের সমস্যা দূর করতে গিয়ে একের পর চালবাজি চলতেই থাকে। শাকিব শুভশ্রীর চালবাজি কতদূর যেয়ে গড়ায় সেটা জানতে হলে পুরো ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে যেয়ে আপনাকে দেখতে হবে।
শাকিবের একের পর এক পাঞ্চলাইন ও রজতাভ দত্তের কমেডি ছিল অসাধারন। বিশেষ করে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা রজতাভ দত্তের কথা বলতেই হবে। ভদ্রলোক কমেডিতে ছিলেন দুর্দান্ত। গুণী এ অভিনেতা হাসির রোলে পুরো হল কাঁপিয়ে ছেড়েছেন। এদিকে রোমান্টিকতার দিক থেকে শাকিব-শুভশ্রী জুটির অভিনয়ও ছবির গল্পে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা । শ্রীজাতার কাকার ভূমিকায় আশিস বিদ্যার্থীও বেশ ভাল অভিনয় করেছেন। তবে অ্যাকশন দৃশ্যগুলো খুব একটা জমেনি। সেদিকে আরেকটু ইম্প্রুভমেন্টের দরকার ছিল। আর এত বড় সুপারস্টার হিসেবে শাকিবের ফিটনেসের প্রতি খুব যত্নবান হওয়া উচিত। নাচের দৃশ্যগুলোতে শরীরের মেদ স্পষ্ট চোখে লাগে। এই শরীরে কমার্শিয়াল ফিল্ম একেবারেই বেমানান, তবে কমেডি দিয়ে শাকিব সেটা চাপিয়ে গেছেন। অভিনয়ে যথারীতি ভালো অভিনয় করেছেন শাকিব। সিনেমার শুরুতে একটু বেমানান লাগলেও শাকিবের চালবাজিতে একসময় আপনিও সামিল হবেন বিনোদনের এক জমজমাট আয়োজনে। শাকিবের বিপরীতে থাকা শুভশ্রী তার জায়গা থেকে আরেকটি প্রশংসনীয় পারফর্মেন্স দিয়েছেন। ট্যালেন্টেড এ অভিনেত্রী দরুন সব এক্সপ্রেশন এবং নজরকাড়া অভিনয় কারিশমা দিয়ে পরিপূর্ন করেছেন চালবাজ সিনেমাটি। গানগুলোর ব্যাপারে আলাদা করে বলতেই হচ্ছে। দুর্দান্ত লোকেশনে শ্রুতিমধুর সব ট্র্যাকে শাকিব শুভাশ্রীর রোমান্স একেবারেই হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মতো। বেশ কয়েকটি বলিউড এবং তামিল সিনেমার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হলেও চালবাজ সিনেমাটি প্রশংসার প্রাপ্য তার নির্মাণশৈলীর জন্য। নাচ , গান ,একশন,কমেডি, রোমান্স সাথে বোনাস হিসেবে ক্লাইমেক্স কি ছিলনা চালবাজে। এক সিনেমায় এতকিছুর সঠিক সংযোজনের জন্য পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি ক্রেডিট পেতেই পারেন। পরিশেষে বলবো চালবাজ সত্যিই একটি দেখার মত সিনেমা। শাকিবের ক্যারিয়ারে আরেকটি সফলতার পালক যোগ করতে যাচ্ছে সিনেমাটি।