আমাদের রেটিং: ৫ এ ৩.৫
অভিনেতা: আরেফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, শতাব্দী ওয়াদুদ, এ বি এম সুমন, নওশাবাসহ আরো অনেকে
পরিচালক: দীপংকর দীপন
ছবির ধরন : কপ থ্রিলার
বাংলা চলচ্চিত্রে কখনোই পুলিশকে, পুলিশের লাইফস্টাইলকে, পুলিশের অপারেশনগুলোকে ভেতর থেকে দেখার সুযোগ হয় নি। সেই আফসোস মিটিয়ে দেবার জন্যই ঢাকা অ্যাটাক হাজির হয়েছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম কপ থ্রিলার নিয়ে। বাংলাদেশ পুলিশের ভেতর-বাহির, স্যাক্রিফাইস ও থ্রিল- সবটুকুই বোঝানোর দায় নিয়েছে ঢাকা অ্যাটাক। হঠাৎ শুরু হওয়া সিরিয়াল কিলিং, প্রতি খুনে খুনির নিজের চিহ্ন রেখে যাওয়া, আতংকিত দেশবাসীদের বাচঁতে জীবনবাজি রেখে বোমা ডিসপোজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়া পুলিশ অফিসারদের দল আর মানসিকভাবে বিকৃত এক ভিলেনের গল্প এই “ঢাকা অ্যাটাক”।
অভিনয় শৈলীর কথা বলতে গেলে বোম্ব ডিস্পোজাল স্পেশালিস্ট এর ভুমিকায় অভিনয় করা আরিফিন শুভর প্রশংসা করতেই হবে। অসাধারন অভিনয়ের পাশাপাশি অভিব্যাক্তি আর বডি ল্যাংগুয়েজে আরিফিন শুভ মাত করে দিয়েছেন। পুরোদস্তুর পুলিশের পোশাকে অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে এই নায়ককে দেখে দর্শকদের ছিল সরব উল্লাস। এই সিনেমার মধ্যে দিয়েই আবার অ্যাকশন থ্রিলার ছবিতে ফিরছে অগ্নিকন্যা মাহিয়া মাহি।ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কীভাবে একটা সিরিয়াল কিলিং কেসে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তা দারুণভাবে উপস্থাপন করেছে মাহিয়া মাহি। ট্রেইলারেই দারুন সাসপেন্স তৈরী করেছিল ভিলেন চরিত্রটি। ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে জিসান এখানে পুরোপুরি সফল। আশা করা যায়, বাংলা চলচিত্র নতুন একজন ভিলেনকে পেল। ভালো লাগে ছোট ছোট চরিত্রে অতীতের শক্তিমান অভিনেতা হাসান ইমাম, আফজাল আহমেদ আর আলমগীরকে একসাথে দেখতে, যদিও খুবই অল্প সময়ের জন্য। আর এই সিনেমায় বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অফিসার এর ভুমিকায় অভিনয় করেছেন শতাব্দি ওয়াদুদ। পুরো সিনেমায় জুড়েই ছিল তাঁর দাপুটে অভিনয়। নতুন জুটি হিসেবে এ বি এম সুমন আর নওশাবাকে পাবে দর্শক । দুজনের অভিনয়ই ছিল প্ৰশংসনীয়। বিশেষত সোয়াট কমান্ডারের ভুমিকায় অভিনয় করা এবিএম সুমনের অভিনয় শৈলীর কথা আলাদা করে বলতেই হবে।
গল্প যত এগোয় ততই পেঁয়াজের খোসার মতো ঘটনার ঘনঘটা আর চরিত্রের বৈশিষ্ট পরতে পরতে ছাড়তে থাকেন পরিচালক৷ সিরিয়াল কিলিং নিয়ে একটা দুর্দান্ত স্টোরির আভাস সিনেমার প্রথম অংশেই পাওয়া যায় আর ইন্টারভ্যালের পর যেন কাহিনীর মোর পুরোই ঘুরে যায়। ক্রাইসিসের টানটান উত্তেজনা সারাক্ষণই বজায় থাকে৷ কোথাও বিরক্ত হবার সুযোগ নেই। তবে মালয়েশিয়ায় ধারনকৃত অংশে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার আরো একটু কমানো যেত। সাসপেন্স, লাইফ রিস্ক, প্রিয়জনের মায়া আর ভালোবাসার টানের চেয়েও পেশা আর দেশের প্রতি ভালোবাসা আর দায়িত্ব বড় তাই দেখানো হয় এ ছবিতে।
এই সিনেমার গানগুলো আসলেই প্রশংসার দাবিদার। বিশেষত ‘টুপ টাপ’ গানটি ছিল অসাধারন। গানগুলোর টাইমিংও ছিল বেশ ভালো। আইটেম গান “টিকাটুলীর মোর” এ আরো ভালো কোন আইটেম গার্ল নাচলে ভালো হতো। ছবির প্রোডাকশন ডিজাইন খুব উন্নত৷ বাংলা ছবির পক্ষে তো বটেই৷ সংলাপের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে পরিপূর্ন সিনেম্যাটিক ছোঁয়া। সিনেমায় ব্যাবহৃত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকভালো ছিল। রুদ্ধশ্বাস দৃশ্যে অনিশ্চয়তার পরিবেশ আনার জন্য ব্যবহৃত আবহ-সুর মানানসই ছিল। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর সিনেমাটোগ্রাফি ও গ্রাফিক্সের কাজ ছিল প্রশংসনীয়। দিনশেষে বাংলা সিনেমার প্রতি ভালোবাসা সবারই আছে। আর সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতেই বড় বাজেটে, মানসম্মত গল্পে, চৌকস অভিনেতাদের নিয়ে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে থ্রিলার জনারে নতুন স্ট্যান্ডার্ড সেট করতে আসছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’। সেই ভালোবাসা প্রতিদান নেবার জন্যই চলুন যাওয়া যাক ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দেখতে।