সালমান শাহ-যেন এক কিংবদন্তির নাম। এ দেশের একমাত্র নায়ক যে প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামের এক সাধারণ ছেলে মাত্র চার্ বছরের ক্যারিয়ারে হয়ে যান বাঙলা চলচ্চিত্রের ধ্রুবতারা, হয়ে যান সবার প্রিয় সালমান শাহ। আসুন জেনে নেই এ নায়কের ব্যাপারে কিছু অজানা কথা | ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেমবার সিলেটে জন্মগ্রহন করা এ মহা নায়ক ছিলেন পারিবারিক ভাবেই সংস্কৃতির সাথে জড়িত। সালমান শাহ এর নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র মুখ ও মুখ মুখোশ এ অভিনয় করেছিলেন।
পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় আদরের ছিলেন। তিনি কিন্তু ভালো গান ও গাইতেন। ১৯৮৭ সালে মেট্রিক পাশের সময় তিনি বন্ধুদের কাছে কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ধানমন্ডির মালেকা সাইন্স কলেজ থেকে স্নাতক করা সালমান ছায়ানট থেকে ১৯৮৭ সকে পল্লিগীতিতে উর্তৃন্ন হয়েছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রে আসারও ২ বছর আগে ১৯৯১ সালের ১২ আগস্ট, মায়ের বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন। মাত্র ৫ বছরের সংসার জীবন ছিল তার। সামিরা সালমানের কিছু চলচ্চিত্রে সালমানের পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন।
প্রথম ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান হলেও মিডিয়াতে তার যাত্রা হানিফ সংকেতের হাত ধরে । ইত্যাদি অনুষ্ঠানের একটি গানের মডেল হয়েছিলেন তিনি। বিজ্ঞাপনও ছিল তার পদার্পন ,মিল্ক ভিটা , জাগো, কিটস গোল্ড ষ্টার টি ,কোকাকোলা, ফান্টার বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। টিভি নাটকেও ছিল তার দৃপ্ত পদচারনা ।
৫ ফিট ৮ উচ্চতার বৃশ্চিক রাশির এ নায়কের প্রথম ছবি ছিল নায়িকা মৌসুমীর সাথে কেয়ামত থেকে কেয়ামত। শাবনূরের সাথে সর্বাধিক ছবি ছিল তার।
তরুণদের স্টাইল আইকন ছিলেন তিনি । রং বেরং এর টুপী, ব্রেসলেট, গোল সানগ্লাস, ফেড জিন্স হাত গুটানো শার্ট এর ট্রেন্ড তিনিই শুরু করেন। এমনকি সিনেমার জন্য বিদেশ থেকে নিজের টাকায় পোশাক কিনে আনতেন এই সফল নায়ক।
তার করা শেষ ছবি বুকের ভেতর আগুন । এ ছবির অর্ধেক কাজ শেষ করেই মারা যান তিনি। জীবনের মতন তার মৃত্যুটাও ছিল চাঞ্চল্যকর। মিডিয়াতে জানানো হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন কিন্তু সকল তথ্য প্রমান এর বিপরীত। সাংসারিক জীবনে ভালো না থাকা সালমানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার মায়ের ছিল পরকীয়ার অভিজোগ। সালমানের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত মৃতদেহ সামিরা ছাড়া আর কেউ দেখে নি , কিন্ত আজ পর্যন্ত সামিরার কোন জবানবন্দিও পাওয়া যায়নি। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টসহ সালমানের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে সামিরার কাজকর্ম পাওয়া গেছে অনেক অসঙ্গতি। এই মহা নায়কের মৃত্যুতে ২১ জন তরুনী আত্মহত্যা করলেও সালমান নিজে আত্মহত্যা করেছেন না খুন হয়েছেন তা আজ অজানা রয়ে গেছে।
একুশ বছর ধরে তার ভক্তরা অপেক্ষা করছেন এই রহস্য সমাধানের জন্য। আর কোন হদিশ নেই। তাহলে কি এভাবেই কেটে যাবে আরো একুশ বছর? ভক্তরা ভালোবাসা আর দুঃখ ভরা মনে অপেক্ষায় আছেন এর উত্তরের ।