অসহায়ভাবেই বাবার মৃত্যু দেখতে হবে : শিল্পী আব্দুল জব্বারের পুত্র

দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটছে। কালজয়ী এই গায়কের দুটি কিডনিই বর্তমানে নষ্ট। আছে আরও অনেক সমস্যা।

272
সংগৃহীত

এক সময় বাংলাদেশের মানুষ মোহিত হয়েছিল ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘ওরে নীল দরিয়া’ এর মত গানে। উজ্জীবিত হয়েছিল ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের মাধ্যমে। সেই সব গানের কিংবদন্তি গায়ক আবদুল জব্বার তিন মাস ধরে অসুস্থ। বর্তমানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২০ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটছে। কালজয়ী এই গায়কের দুটি কিডনিই বর্তমানে নষ্ট। আছে আরও অনেক সমস্যা।

সংগৃহীত

তার চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত আবদুল জব্বারকে দেশের বাইরে নেয়া প্রয়োজন। আবদুল জব্বারের ছোট ছেলে বাবু জব্বার এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গত দুদিন ধরেই বাবার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। তিনি এখন কাউকে ভালো করে চিনতে পারছেন না। ডাক্তার বলেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বাবাকে দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। নইলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু সেই সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই অসহায়ভাবেই বাবার মৃত্যু দেখতে হবে হয়তো।’

আবেগতাড়িত হয়ে বাবু আরো বলেন,‘যে পিতা এত স্নেহ, সম্মানে বেড়ে ওঠার পরিবেশ দিলেন সেই পিতার জন্য সন্তান হিসেবে কিছুই করতে পারছি না। চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে বাবা কষ্ট পাচ্ছেন।’

আবদুল জব্বারের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। একটি কিডনি হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব। এছাড়া তার প্রেসার একেবারেই নেমে যাচ্ছে, পায়ে পানি নেই। তিন মাস হাসপাতালে শুয়ে আছেন। পিঠের অনেক স্থানে ঘা হয়ে গেছে।

বাবু জব্বার বলেন, ‘প্রতিদিন ইনজেকশন দিতে হচ্ছে। অনেক টাকা যাচ্ছে। হাতের সবই প্রায় শেষ। এত টাকা কোথায় পাব? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই বছর আগে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছিলেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন। তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সাহায্য পাইনি। আমরা নিজেরাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করছি। পারছি না।’

গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে একসময় গণসংগীত গেয়েছেন তিনি। গান গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পদক অর্জন করেছেন।

১৯৭১ সালে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যান।

‘ও..রে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও  ‘পিচ ঢালা এই পথটাকে ভালোবেসেছি’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন শিল্পী আব্দুল জব্বার।