এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সিনেমায় রাজত্ব করছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের কাছে এই তারকার সিনেমা মানেই নিশ্চিন্ত নির্ভরতা ও ব্যবসায়িক সফলতা। দেশে ও দেশের বাইরেও দর্শক জনপ্রিয়তা আছে তাঁর।
বাংলাদেশের সিনেমার প্রযোজক আর পরিচালকেরা শাকিবের পরবর্তী আরও কয়েকজন নায়কের খোঁজ করছিলেন, যাঁরা হয়ে উঠতে পারবেন যোগ্য উত্তরসূরি। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে দেশের সিনেমার নির্ভরযোগ্য সেই নায়কের অভাব ঘুচতে যাচ্ছে বলে পরিচালক, প্রযোজক, মালিকসহ অনেকেরই অভিমত। আরিফিন শুভ হয়ে গিয়েছেন দেশের নির্ভরযোগ্য আরেকজন নায়ক।
৬ অক্টোবর সারা দেশে মুক্তি পায়দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’। দ্বিতীয় সপ্তাহেও সমান তালে চলছে এই সিনেমা। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হওয়া দর্শক বলছেন, বহুদিন পর একটি ভালো মানের দেশি সিনেমা দেখেছেন তাঁরা। সিনেমার ব্যবসায়িক সফলতার পর দর্শকের পাশাপাশি সিনেমা–সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, দেশের সিনেমায় আরিফিন শুভ সম্ভাবনার বড় জায়গাটা দখল করতে যাচ্ছেন। নির্ভরতার আরেক নাম হতে যাচ্ছেন আরিফিন শুভ।
আরিফিন শুভকে দেখেই তার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেত্রী কবরী। তিনি বলেন, ‘আরিফিন শুভকে আমি প্রথম দেখেছি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনায়। প্রথম দেখায় মনে হয়েছে, তাঁর মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা আছে। এখন শুনছি, তাঁর “ঢাকা অ্যাটাক” সিনেমা ভালো ব্যবসা করছে। সবাই মিলে ওরা ভালো করুক। তবে ওদেরকে আরও সময় দেওয়া দরকার, শুধু একটা সিনেমা দিয়ে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’
এদিকে আরিফিন শুভর প্রশংসা করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর ধরে আরিফিন শুভ সিনেমায় কাজ করছেন। এর আগে “অগ্নি”, “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি” আর “ছুঁয়ে দিলে মন” দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। তাঁর জন্য ব্যবসায়িকভাবে একটা হিট সিনেমার দরকার ছিল। “ঢাকা অ্যাটাক” দিয়ে তা পূরণ হয়েছে। আমার তো এও মনে হয়েছে, শুভর সঙ্গে মাহি মিলে দারুণ রোমান্টিক জুটি গড়ে উঠতে পারে। আমি নিজেও ওদেরকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর জন্য মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তবে ইন্ডাস্ট্রির একজন নির্ভরযোগ্য নায়ক হিসেবে আরিফিন শুভকে কি করতে হবে সেই প্রসঙ্গে নওশাদ বলেন, ‘শাকিব খান অনেক বছর ধরেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন। একটা ইন্ডাস্ট্রি তো শুধু একজন নির্ভরযোগ্য নায়ক দিয়ে টিকে থাকতে পারে না। পাশাপাশি আরও কয়েকজন সম্ভাবনাময় আর নির্ভরযোগ্য তারকার দরকার। “ঢাকা অ্যাটাক” সিনেমা দেখে মনে হয়েছে, আরিফিন শুভ ঠিকভাবে নিজেকে পরিচালিত করতে পারলে খুব ভালো অবস্থানে যেতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। ভাগ্য সহায় হলে পর্দায় শাকিবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন।’
আরিফিন শুভ যে প্রযোজকদের নির্ভরতার জায়গায় পরিনত হচ্ছেন সেই ব্যাপারে প্রযোজকদের নেতা নাসির উদ্দিন দিলু বলেন, ‘নায়ক হিসেবে শুভ নিঃসন্দেহে সম্ভাবনাময়। তাঁর দরকার ছিল ব্যবসায়িকভাবে হিট হওয়া একটা সিনেমা। “ঢাকা অ্যাটাক” সিনেমার কারণে শুভর প্রতি এখন প্রযোজকদের একটা নির্ভরতাও তৈরি হবে।’
আরিফিন শুভর যে আলাদা দর্শক তৈরি হয়েছে সেটার প্রসঙ্গে বলাকা প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার গল্প, নির্মাণ—সবই ভালো হয়েছে। নায়ক হিসেবে এই সিনেমা শুভর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। মনে হচ্ছে, তাঁরও আলাদা একটা দর্শক তৈরি হয়েছে, যাঁরা প্রেক্ষাগৃহে আসছেন শুধু তাঁর সিনেমা দেখার জন্য। একজন নায়কের জন্য তা খুবই ইতিবাচক।’
তবে শাকিব খানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে আরিফিন শুভকে কি করতে হবে সেই বিষয়ে বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি সারোয়ার দিপু বলেন, ‘ঈদ ছাড়া গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা “ঢাকা অ্যাটাক”–এর মতো এত রেকর্ড সেল হয়নি। সে ক্ষেত্রে আমরা আশা করতেই পারি শুভকে নিয়ে। তবে এটাও ঠিক যে শাকিব খান এখনো বাংলাদেশের সিনেমাতে একচেটিয়া। আরিফিন শুভ যদি “ঢাকা অ্যাটাক”–এর মতো এ রকম হিট ছবি টানা আরও কয়েকটা উপহার দিতে পারেন, তিনিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। দেশের যেখানেই “ঢাকা অ্যাটাক” সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, সব জায়গার খবর ভালো। এই সিনেমার প্রতি মানুষের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তা সাধারণত ঈদের সময় আমরা দেখি। শুভর জন্য তা খুবই আশার কথা।’
যেই শুভকে নিয়ে সবাই এত কিছু ভাবছেন, এত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলছেন, সেই শুভ ব্যাপারটিকে সেভাবে না দেখে মিলেমিশে কাজ করার আহবান জানান।
শুভ বলেন, ‘শাকিব খান আমাদের বড় ভাই। তিনি দেশের সিনেমায় বড় একটা আসনে আছেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি একাই দেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন দেশের বাইরেও তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কিছু নেই। আমরা সবাই মিলে ভালো আর ব্যবসায়িকভাবে সফল সিনেমায় কাজ করতে চাই। দেশের সিনেমার দর্শকেরা “ঢাকা অ্যাটাক” দেখছেন, প্রশংসা করছেন একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে অনেক আনন্দের। সবাই আমাদের সিনেমা দেখুন, উৎসাহ দিন।’
২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া খিজির হায়াত খান পরিচালিত সিনেমা ‘জাগো’ আরিফিন শুভর অভিনীত প্রথম বাংলা সিনেমা। অভিনয়জীবন শুরুর আগে আরিফিন শুভ র্যাম্প মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি রেডিওতে কথাবন্ধুর কাজও করেছেন। এরপর তিনি টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। নানাজনের সমালোচনা শোনার পর ভালোবেসে সিনেমাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন শুভ। যার ফল এখন তিনি পাচ্ছেন।