সালমান শাহ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক কিংবদন্তী। এমন কিংবদন্তি আর কোনদিনও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আসবে কিনা সেটা সবারই অজানা।
তার আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। জন্মগ্রহন করেছিলেন ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেমবার সিলেটে। পড়াশুনা করেন ঢাকার আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজে।
বাংলা চলচ্চিত্রের এ অমর নায়কের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ‘পাথর সময়’ নামক একটি সিরিয়ালের মাধ্যমে। তার অভিনীত প্রথম বাংলা ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। প্রথম ছবিতেই তিনি তার অভিনয়ের দক্ষতার সাক্ষর নিখুত ভাবেই রাখতে পারেন। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত এ ছবিটি ছিল ১৯৮৮ সালে বলিউডে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’ ছবির রিমেক।
এরপর আর পিছনে তাকানো নয়। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েই যাচ্ছিলেন এই অমর নায়ক। এই মহানায়ক চলচ্চিত্রে ছিলেন মাত্র ৪ বছর (১৯৯৩-১৯৯৬)। আর এই ৪ বছরে ছবি উপহার দিয়েছেন মাত্র ২৭ টি। তার বিপরীতে কাজ করা অভিনেত্রী ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন। তারা হলেন শাবনুর, মৌসুমি, শাবনাজ, লিমা, বৃষ্টি ও শিল্পি। এর মধ্যে শাবনুরের সাথে ছবি করেছেন ১৪ টি, মৌসুমির সাথে ৪ টি, শাবনাজের সাথে ৪ টি, লিমার সাথে ২ টি, বৃষ্টির সাথে ১ টি এবং শিল্পির সাথে ১ টি। তবে দর্শক মহলে শাবনুরের সাথে তার জুটির গ্রহনযোগ্যতা ছিল সবচেয়ে বেশি ও আকর্ষনীয়।
সালমান শাহের সব ছবিই ছিল ব্যাবসা সফল। তার প্রথম ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বলেছেন, ‘সালমান শাহ কে যখন কোন শট দিতে বলা হত তখন কিন্তু ওকে বলা হত না কিভাবে শটটা দিতে হবে। তারপর সালমান যেই শট গুলা দিত, দেখা যেত সেগুলা পরিচালকদের কামনার থেকেও বেশি কিছু’।
তিনি আরো বলেন, ‘সালমানের অভিনয়ের শৈল্পিক ব্যাপার গুলো সম্পুর্ন তার নিজের সৃষ্টি। আর এই গুনটিই তাকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছে’।
এই ৪ বছরের গুটি কয়েক নায়িকার সাথে মাত্র কয়েকটা ছবি দিয়ে বাংলা ছবির ইতিহাসে তিনি স্থাপন করে গিয়েছেন কিংবদন্তির দৃষ্টান্ত। ১৯৯৩ সালে মানুষ তাকে খুব ভালমত চিনলেও এই মহান নায়ক মিডিয়াতে এসেছিলেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে ‘সৈকত সারস’ নামের একটি শো এর মাধ্যমে মিডিয়াতে পদচারনা শুরু হয় তার। বড় পর্দায় তুমুল জনপ্রিয় হলেও এই নায়ক ভুলে যান নি তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের টেলিভিশন শো গুলোর কথা। তাই বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দার সিরিয়াল ও তিনি করে গিয়েছেন।
তার করা টেলিভিশন শো গুলার মধ্যে ছিল –সৈকত সারস, পাথর সময়, ইতি কথা, আকাশ ছোয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, নয়ন এবং স্বপ্নের পৃথিবী।
তিনি সামিরাকে বিয়ে করেন ১৯৯১ সালে। চলচ্চিত্রে আসারও ২ বছর আগে। তার ৫ বছরের সংসার জীবনে সামিরার সাথে রেষারেষির বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৯৯৬ সালের ৬ ই সেপ্টেমবার সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন এই মহান নায়ক। পুলিশ ব্যাপারটিকে সেভাবেই বর্নণা করে। তবে এটা আত্মহত্যা ছিল না খুন ছিল সে ব্যাপারে অনেক কথা হয়েছে। এমনকি এখনো হচ্ছে। ধারনা করা হয় সালমানের মৃত্যুর পেছনে তার স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবারের হাত রয়েছে। আরো কিছু মানুষের নাম ও উল্লেখ আছে। এর একটি সুস্পস্ট ধারনা পাওয়া যায় সাংবাদিক সুপন রায়ের লেখ ‘সালমান সাহ এর অজানা কথা বইটিতে’। প্রতি বছরই সালমান শাহ এর জন্মদিনে ‘সালমান শাহ স্মৃতি পরিষদ’ উদযাপন করে থাকে।
তবে অকালে চলে গেলেও তিনি বেচে আছেন তার প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে। দিয়ে গেছেন অনেক উপহার।