বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও তাঁর ব্যক্তিজীবনে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা টানাপোড়েন একটা সময় গিয়ে তালাক নোটিশে রূপ নেয়। গত বছরের ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাকিব খান তাঁর আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের কার্যালয়ে যান। তিনি অপুকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে সিরাজুল ইসলামের কাছে আইনগত সহায়তা চান।
পরবর্তীতে শাকিব খানের পক্ষে তাঁর আইনজীবীর অফিস থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র কার্যালয়, অপু বিশ্বাসের ঢাকার নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায় তালাক নোটিশ পাঠানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিনএসিসি) পারিবারিক আদালত থেকে শাকিব খানের পাঠানো তালাক নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ মহাখালী কার্যালয়ে তাঁদের দুজনকেই থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএনসিসি অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন।
ডিএনসিসি অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ‘নিয়মানুযায়ী তারা উভয় পক্ষকে তিনবার ডাকবেন। তাঁরা যদি সমঝোতা করে সংসার শুরু করতে চান, চেষ্টা করবেন সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার। কিন্তু যদি তাঁদের কেউ পূর্বের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাদের আর কিছুই করার থাকবে না।’
ডিএনসিসির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘তাদের কেউ আগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে চাইলে বৈঠকে আসেন না। এটা আসলে তিনি কিংবা তাঁদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে তারা কোন জোর খাটাতে পারেন না বলেও জানান তিনি। এ কথা জানিয়ে তাঁদের আরও দুবার নোটিশ দিয়ে শুনানি করা হবে। এরপরও যদি তারা নিজেরা সমঝোতা করে ধর্মীয় রীতিতে সংসার শুরু করতে চান। তাহলে পারবেন। আর তা না করলে তিনবার শুনানির পর নিয়মানুযায়ী তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।’
প্রথম শুনানী ১৫ জানুয়ারি। আর বাকি রয়েছে মাত্র এক সপ্তাহের মত সময়। এ বিষয়ে অপু বিশ্বাস বলেন,‘আমি এ বিষয়ে বলতে চাই, আমি ডিভোর্সের পক্ষে না, কারণ আমার একটি সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে কথা বলে আর কথা বাড়াতে চাই না গণমাধ্যমে। বিষয়গুলো এখন এতো সিলি হয়ে গিয়েছে, আমার এখন সত্যিই ভালো লাগে না। তারপর কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে মাঝে মাঝে আমাকে এ বিষয়ে কথা বলতে হয়। সময় তো এখনও কিছুটা আছে। এমনও হতে পারে, একদিনে অনেক কিছুই পাল্টে যেতে পারে। সেটা ভাগ্যের ব্যাপার। তবে আমি আর বেশি কথা বাড়াতে চাই না।’
এদিকে শাকিব খান বর্তমানে ‘আমি নেতা হবো’ ছবির শুটিংয়ে রয়েছেন ব্যাংককে। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন উত্তম আকাশ। এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশি সিনেমার এ সময়ের আলোচিত নায়িকা শবনম বুবলীর সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে একটি স্থির ছবিতে শাকিব খানকে দেখা যায়। ছবিতে ‘ফ্যামিলি টাইম’ ক্যাপশন লিখে নিজের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করেন বুবলী। এরপরই অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শাকিব খানের।
এরপর ছবিটি প্রকাশের গত বছরের ১০ এপ্রিল (সোমবার) বিকেল ৪টায় দীর্ঘদিন গোপনে থাকা বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন অপু। দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সব গোপন কথা ফাঁস করে দেন। এরপর থেকেই তাদের সম্পর্কের অবনতির দিকেই বাড়ছিলই।
কলকাতার একটি ক্লিনিকে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় শাকিব-অপুর ছেলে আব্রাম খান জয়ের। সে সময় অপু বিশ্বাসের সিজারও করা হয়। অপু বিশ্বাস ২০০৪ সালে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। এরপর ২০০৬ সালে পরিচালক এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা এই জুটি একাধারে ৭০টির মতো ছবিতে জুটি বাঁধেন। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একসময় পরস্পর প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে যান। এরপর ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন শাকিব-অপু।