অবশেষে মুখ খুলে কঙ্গনার বিরুদ্ধে যা বললেন হৃত্বিক

237

দীর্ঘ দিন ধরে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতের সঙ্গে মৌখিক যুদ্ধ চলছে অভিনেতা হৃতিক রোশনের। বাবা রাকেশ রোশনের পরামর্শ মেনে এত দিন এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেই বসেছিলেন হৃতিক। অবশেষে মুখ খুললেন বলিউড হৃতিক রোশন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাদা ছোড়াছুড়ির পর তা গড়িয়েছে আদালতের দরজা পর্যন্ত।

হৃত্বিক ও কঙ্গনার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বলিউডও দু’ভাগে ভাগ হয়েছে। কেউ হৃতিকের পক্ষ নিয়েছেন, কেউ বা কঙ্গনার। কঙ্গনা একাধিকবার প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে হৃতিক সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে কথা বলেননি এত দিন। অবশেষে এক বেসরকারি চ্যানেলে গত শনিবার কঙ্গনা ইস্যুতেই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হৃত্বিক।

কঙ্গনা ইস্যুতে সেই বেসরকারি টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথমেই হৃতিক পরিষ্কার করে দেন, তিনি নিজেকে দোষী মনে করেন না। এই মুহূর্তে তিনি ভাল নেই। কারণ ব্যক্তি জীবনে অশান্তি, যুদ্ধ পছন্দ না হলেও এখন তাঁকে সেটাই করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয় নিয়ে তিনি কখনোই মুখ খুলতেন না, কিন্তু নিজের সন্তানদের কথা ভেবে এবার বিষয়টি পরিষ্কার করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন। এদিকে আজ রোববার বিকেলে কঙ্গনার বড় বোন ও ব্যবস্থাপক রাঙ্গোলি টুইটারে হৃতিকের বিরুদ্ধে কঙ্গনার নগ্ন ছবি ফাঁস করার অভিযোগ এনেছেন।

হৃতিক বলেন, ‘আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু বললে সেটা অ্যাগ্রেসিভনেস হবে। কিন্তু চার বছর ধরে কেউ ক্রমাগত বাড়িতে, পরিবার-পরিজনদের দিকে ঢিল ছোড়ার পরও চুপ করে থাকলে সেটা দুর্বলতা হবে’।

সমস্যার সূত্রপাত হয় ২০১৬ সালে। কঙ্গনা প্রথম প্রকাশ্যে হৃতিককে ‘সিলি এক্স’ বলেন।

হৃতিক বলেন, ‘২০০৮-২০০৯ সালে ওর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়। ওর সঙ্গে সম্পর্কটা সব সময়ই প্রফেশনাল ছিল। কখনও বন্ধুত্বের নয়। আমি তো ওকে অভিনয়ের জন্য শ্রদ্ধাও করি’।

কঙ্গনার দিক থেকে অন্য কোনও ইঙ্গিত পাওয়ার প্রসঙ্গে হৃত্বিক বলেন, ‘২০১২ সালে জর্ডনে একটা পার্টি ছিল। অনেক রাতে দরজা নক করেছিল ও। কথা বলতে চেয়েছিল। আমি খুব টায়ার্ড ছিলাম। আমি কথা বলতে না চাইলেও ওই মহিলা জোর করেছিল। পরে রঙ্গোলি এসে বলেছিল আমি যেন ওর বোনের সম্পর্কে খারাপ কিছু না ভাবি’।

‘কৃষ’ খ্যাত এই তারকা আরও জানান, তিনি ও কঙ্গনা একসঙ্গে কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কখনোই আন্তরিক কোনো সম্পর্ক ছিল না। প্রেম তো দূরের কথা, তাঁরা নাকি কখনো নিরিবিলিতে সময়ও কাটাননি। কঙ্গনা তাঁর ওপর গোপনে নজরদারি করতেন।

হৃতিক অভিযোগ করেন, তাঁর ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছেন ৩১ বছর বয়সী এই নায়িকা। এ ছাড়া হাজার হাজার মেইল পাঠিয়ে হৃতিককে নাকি উত্তেজিত করতে চাইতেন তিনি। নিজের পরিবার ও দুই ছেলে রিহান ও রিদানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর ছেলেদের কথা চিন্তা করেই নাকি এই ‘নোংরা’ বিষয় নিয়ে জনসমক্ষে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।

অপরদিকে কঙ্গনার বোন রাঙ্গোলি এই বলিউড তারকাকে উদ্দেশ করে টুইটারে লিখেছেন, ‘হৃতিক সম্মানের কথা বলেন, পরিবার ও সন্তানদের কথা ভাবেন। তাহলে তাঁর কাছে আমার প্রশ্ন, সাবেক প্রেমিকার প্রতি তাঁর আবেগ দেখে তাঁর ছেলেরা কী শিখবে? হৃতিকের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, কঙ্গনার নগ্ন ছবি ফাঁস করে তিনি তাঁর ছেলেদের কী শিক্ষা দিতে চান? এখন কেউ আমাকে বলবেন না যে আমি কেন অন্যের পরিবারকে এখানে টেনে আনছি। আমি তাঁর কথার সূত্র ধরেই জানতে চাইছি, তিনি কেন আমার বোনের ছবি ফাঁস করেছিলেন?’

রাঙ্গোলি এর আগে হৃতিককে কঙ্গনার চাচার বয়সী বলেও কটাক্ষ করেন। আর হৃতিক তাঁর আইনজীবীকে দিয়ে ২৯ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এক নোটিশ পাঠিয়েছেন কঙ্গনাকে। ‘কুইন’ ছবির নায়িকা কঙ্গনাও কম যান না। নিজের আইনজীবীকে দিয়ে হৃতিক বরাবর নয়টি প্রশ্ন পাঠিয়েছেন তিনি।

তবে কঙ্গনার প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলেও বলিউডের করণ জোহর, ফারহান খান, ফারাহ খান, দিয়া মির্জা, টুইংকেল খান্নাসহ অনেক তারকাই এখন হৃতিকের পক্ষে সাফাই গাইছেন। কঙ্গনার কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, বলিউডে সব সময় স্বজনপ্রীতিরই জয় হয়।

কঙ্গনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে হৃতিক বলেন, ‘একটার পর একটা মিথ্যে বলেছেন কঙ্গনা। কখনও আমাদের বাগদান হয়েছে বলছে তো কখনও বা সামনে এনেছে ফটোশপ করা ছবি। তবে এত সবের পরেও পুলিশে অভিযোগ দায়ের না করার বিষয়ে হৃতিক বলেন, আমি এ সব করতেই চাইনি। আমি ক্রিয়েটিভ মানুষ। আমার সন্তান আছে। এ সবে আমার কোনও আগ্রহ নেই’।

তবে হৃত্বিক গোটা সাক্ষাৎকারে একবারও কঙ্গনার নাম উচ্চারন করেন নি। ‘ওই মহিলা’, ‘ওই মেয়ে’, ‘ওই মানুষ’ এমনকী ‘রঙ্গোলির বোন’ বলে উল্লেখ করলেও ‘কঙ্গনা’ নামটি একবারের জন্যও মুখে আনেন নি তিনি। দুজনের এই যুদ্ধের অবসানের কোন আভাস এখনো পাওয়া যায় নি।